শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগে আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে রাজধানীর আলোচিত বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একাধিক কারণ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির সকল অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার (২ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-২ শাখার উপসচিব মাহবুবা বিলকিস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত) এর শর্তসমূহ প্রতিপালন না করায় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত স্মারকের মাধ্যমে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং-১৮৪১৮/২০১৭ দায়ের করার মাধ্যমে কার্যক্রম চলু রাখে। গত ২৬ জুলাই তারিখে রিট পিটিশনটি প্রত্যাহার করা হয়।’
আরও পড়ুন: কেয়ার মেডিকেলের অনুমোদন বাতিল
অনুমোদন বাতিল ঘোষণার পর পাঁচ বছরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজটির মানোন্নয়ন করতে পারেনি এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনুমোদন বাতিলের যত কারণ
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন বাতিলে বেশ কিছু কারণ মোটা দাগে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নেতৃত্বে গঠিত পরিদর্শন কমিটি সর্বশেষ গত ১৪ জুন ২০২২ তারিখে কেয়ার মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে। পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুসারে কলেজটিতে সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ নেই, শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, বিদ্যমান হাসপাতাল ও কলেজের নামে নিজস্ব জমি নেই, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত নয়, হাসপাতালের শয্যার অকুপেন্সি ৭০ ভাগের স্থলে মাত্র ১০ ভাগ রয়েছে। সর্বোপরি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১ (সংশোধিত) এবং 'বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০১২' অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ পরিচালনার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি।
২. প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন এবং পরে কলেজ কর্তৃপক্ষে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করায় বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর মতামত গ্রহণ করে। তাদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থ বিবেচনায় গত ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে এ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে কেয়ার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কেয়ার মেডিকেল কলেজে নানা ধরনের ঘাটতি ও সমস্যা থাকায় ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি বলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং অধ্যক্ষ জানান। তারা কলেজটি পরিচালনায় আর আগ্রহী না বলেও সভাকে জানায়।
এ অবস্থায় গত ২৩ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সভায় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুমোদন দেন।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত হলো:
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে কেয়ার মেডিকেল কলেজের একাডেমিক অনুমোদন স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে গত পাঁচ বছরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের মানোন্নয়ন করতে পারেনি এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
পরিদর্শন কমিটি কর্তৃক সর্বশেষ গত ১৪ জুন ২০২২ তারিখের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুসারে কলেজটিতে সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ নেই, শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, বিদ্যমান হাসপাতাল ও কলেজের নামে নিজস্ব জমি নেই, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত নয়, হাসপাতালের বেড অকুপেন্সি ৭০ শতাংশের স্থলে মাত্র ১০ শতাংশ রয়েছে। সর্বোপরি, কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ পরিচালনার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও, কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন, কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষের বক্তব্য এবং স্থগিতকৃত কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কলেজ পরিচালনায় তাদের অপারগতা স্বীকার করায় ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২’ এর ধারা-২৪ অনুসারে বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ অবস্থায় গত ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ২/১-এ, ইকবাল রোডে অবস্থিত বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজ অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে।
এমএইচ/জেবি

