মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কম ক্ষতিকর নিকোটিন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ধূমপান ও অপরাধ বাড়বে

ঢাকা মেইল ডেস্ক 
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কম ক্ষতিকর নিকোটিন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপক্ষে প্রতিবেদন

অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর ও নিরাপদ নিকোটিন পণ্যের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে প্রোহিবিশন ডাজ নট ওয়ার্ক (পিডিএনডব্লিউ) ও থোলোস ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা পিডিএনডব্লিউর দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। 

পিডিএনডব্লিউর ‘টুওয়ার্ডস এ স্মোক-ফ্রি বাংলাদেশ ২০৪০’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে কম ঝুঁকিপূর্ণ নিকোটিন পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ধূমপান কমবে না বরং ধূমপানের হার, অবৈধ বাজার এবং সংগঠিত অপরাধ আরও বাড়তে পারে। কালোবাজারি বাড়লে এ খাতে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতেও। 


বিজ্ঞাপন


গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার ভেপিং ও হিটেড টোব্যাকো পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত করে উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন এবং ব্যবহারও নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিবেচনা করছে সরকার। পিডিএনডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে তা জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং আইনশৃঙ্খলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পিডিএনডব্লিউর মুখপাত্র ও থোলোস ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অব কনজ্যুমার ইস্যুজ টিম অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা কখনোই চাহিদা দূর করে না। এটি কেবল বাজারকে অপরাধীদের হাতে তুলে দেয়। বিশ্বের যেসব দেশ এই পথ নিয়েছে, সেখানে এই একই চিত্র দেখা গেছে। দেশগুলোতে অবৈধ বাজারের বিস্তার ও ভোক্তা নিরাপত্তার অবনতি ঘটেছে এবং জনস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।’

প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও ভারতের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, এসব দেশে ভেপিংসহ কম ঝুঁকিপূর্ণ নিকোটিন পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হয়ে বরং এগুলো অবৈধভাবে ছড়িয়ে পড়ে অপরাধী চক্রের নিয়ন্ত্রণে গেছে।

টিম অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় নিষেধাজ্ঞার ফলে বছরে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবৈধ বাজার তৈরি হয়েছে। ব্রাজিলে এসব পণ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকলেও ধূমপানের হার বেড়েছে। দেশটিতে ই-সিগারেটের অবৈধ বাজারের আকার বেড়ে বার্ষিক প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অস্ট্রেলিয়ায় ১৪-১৭ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে ভেপিংয়ের হার ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৮ গুণ বেড়েছে। ব্রাজিলে ২০২৪ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১১ জন কিশোরের একজন ভেপ ব্যবহার করে।’


বিজ্ঞাপন


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলে কম ক্ষতিকর বিকল্প পণ্য নিষেধাজ্ঞা থাকায় ধূমপানের হার এখনও বেশি। ব্রাজিলে ধূমপানের হার ২০২৩ সালের ৯.৩% থেকে ২০২৪ সালে ১১.৬% হয়ে গেছে। আর অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কেবল সামান্য কমে ১২.৩% থেকে ১১.৮% হয়েছে। 

এতে আরও বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও ভারতে ভেপ পণ্যের নিষেধাজ্ঞার ফলে কালোবাজার ও অপরাধ বেড়েছে; ভারতে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ই-সিগারেটের অবৈধ বাজার এতটাই বিস্তৃত যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। যেমন- সম্প্রতি একটি অভিযানেই প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ই-সিগারেট পণ্য জব্দ করা হয়।

পিডিএনডব্লিউ ও থোলোস ফাউন্ডেশন সতর্ক করেছে, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাংলাদেশেও অবৈধ বিতরণ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছে, যা শক্তিশালী হলে সরকার পণ্যের মান, কিশোরদের ধূমপান রোধ কার্যক্রম এবং এ সম্পর্কিত আইন প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ হারাবে। এভাবে অবৈধ বাজার বড় হলে ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের উচিত নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে ঝুঁকি-অনুপাতে একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গ্রহণ করা। এতে তামাকপণ্য গ্রহণের বয়সসীমা কঠোরভাবে কার্যকর করা, পণ্যের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর আদায় এবং অবৈধ ব্যবসা দমন করা সম্ভব হবে।

টিম অ্যান্ড্রুজ বলেন, “নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হয়, নিষেধাজ্ঞা নয়। সুইডেন, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো তামাকের কম ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ধূমপানের হার কমাতে পেরেছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ধূমপায়ী এবং তামাকজনিত রোগে ২১.৯% মৃত্যু হওয়ায় বাংলাদেশে প্রমাণভিত্তিক জনস্বাস্থ্য নীতি জরুরি। তামাকের নিরাপদ বিকল্প গ্রহণ ও কার্যকরী জনস্বাস্থ্য নীতিমালা অনুসরণ করলে আগামী ৪০ বছরে প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে রাজস্ব ক্ষতিও এড়ানো যাবে। তাই নিষেধাজ্ঞার বদলে ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসভিত্তিক নীতিই বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পিডিএনডব্লিউ ও থোলোস ফাউন্ডেশন। -বিজ্ঞপ্তি 

ক.ম/ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর