বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মেন্টাল ট্রমায় ৭৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২০ এএম

শেয়ার করুন:

মেন্টাল ট্রমায় ৭৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছর দিবসটির প্রতিপ্রাদ্য- ‘মানসিক স্বাস্থ্যই মানবাধিকার’। সারাবিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালন করা হয়।

এদিকে, দিবসটি পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পৃথকভাবে সভা, সেমিনার ও শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, করোনাকালে মানসিক রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে থাকে। অথচ, আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন। সাধারণত সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না বলেই আত্মহত্যা বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন এ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গত পাঁচ বছরে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। তবে দেশে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একটি জরিপ চালায়। ঐ জরিপ বলছে, দেশে লঘু থেকে গুরুতর মাত্রার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা প্রাপ্তবয়স্ক ১৭ শতাংশ (নারী ১৯ শতাংশ পুরুষ ১৫ শতাংশ)। ১৮ বছরের নিচের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভুগছে মানসিক সমস্যায়। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর (মনোচিকিত্সক, মনোবিজ্ঞানী ও অন্যান্য প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী) সংখ্যা ১ হাজারের কম। মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ চিকিত্সার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, মানুষ সবসময় বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তায় এবং চাপে থাকার কারণে তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ফলে মানুষ বিভিন্ন রকম খারাপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আত্মহত্যা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কম পারিশ্রমিক, কর্মী ছাঁটাই, কর্মক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, দারিদ্র্য ও সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়ে মূলত কর্মীরা বিষণ্নতায় ভোগেন। কর্মক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজনে একজন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আর তাদের মধ্যে গুরুতর মানসিক অসুস্থতার জন্য ৮০ শতাংশ কাজ হারান।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের বেশিরভাগই কর্মক্ষম। পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে এর স্বীকৃতি না পাওয়া, কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও হতাশায় তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত।


বিজ্ঞাপন


এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, মানসিক রোগ দুই ধরনের। এর মধ্যে গুরুতর হলো সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা, আলঝেইমারস। আর সাধারণ মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, শুচিবায়ু, ফোবিয়া বা ভীতি ও বিষণ্নতায় ভোগা। বাইপোলার ডিজঅর্ডার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা। ওষুধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয় না।

তারা বলেন, মেন্টাল ট্রমায় ভূগছেন ৭৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী । কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত তারা। মানসিক স্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়; এটি আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক ভারসাম্যের ভিত্তি। সহকর্মী, বন্ধু, পরিবার কিংবা আত্মীয় সবার মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা মানবিক দায়িত্ব এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার বাস্তব প্রকাশ।

এসএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর