রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রথমবার সরাসরি ভোট হচ্ছে বিপিএমসিএ’র, আলোচনায় মহিউদ্দিন-মুকিত প্যানেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

BPMCA
আলোচনায় মহিউদ্দিন-মুকিত প্যানেল। ছবি: সংগৃহীত

নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবার সরাসরি ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনে (বিপিএমসিএ)। আগামীকাল বুধবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে সরাসরি কোনো নির্বাচন হয়নি। এতদিন সিলেকশনের মাধ্যমেই কতিপয় পদবীধারীরা পদে আসীন হয়েছেন। ফলে সংগঠনে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদের সৃষ্টি হয়। সেই কর্তৃত্ববাদের অবসানের লক্ষ্যেই দাবি উঠে সরাসরি ভোটের।


বিজ্ঞাপন


৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান সংগঠনের বর্তমান কমিটির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খান। তারপর থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। ফলে সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের দাবি আরও জোরালো হয়। এতে বর্তমান কমিটি বাধ্য হয় নতুন নির্বাচনের পথে যেতে। এ সময় তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগে আবেদন করলে ২ নভেম্বর ২০২৪ হতে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন মাসের সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়েও বর্তমান কমিটি নির্বাচনে দিতে গড়িমসি করে। তখন সদস্যদের জোরালো দাবির মুখে কমিটি আবারো সময় বাড়ানোর আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও ছয় মাস সময় বাড়ায়। বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ছয় মাস সময় মঞ্জুরের বিধান থাকলেও দুই দফায় মোট নয় মাস সময় বাড়ানো হয়েছে, যা আইনের পরিপন্থী।

নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনী বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনী তফসিলে ইচ্ছাকৃতভাবেই অসঙ্গতি সৃষ্টির। নির্বাচন বাতিল করে সিলেকশনের মাধ্যমে বর্তমান সভাপতির পছন্দের কাউকে শীর্ষপদে বসাতেও বিভিন্ন মহলে জোর তদবির চালিয়েছেন। তবে সদস্যদের জোর প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

সদস্যদের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই অবশেষে নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে বুধবার ভোটাধিকারের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বিপিএমসিএর সাধারণ ভোটাররা।

বিপিএমসিএর কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে এবার দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন-মুকিত পরিষদ বেশ আলোচনায় রয়েছে। অন্য প্যানেলটি হলো আফরোজা-মোয়াজ্জেম পরিষদ।


বিজ্ঞাপন


নির্বাচনে ৫৫টি মেডিকেল কলেজের ১১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করবেন।

আরও পড়ুন

মহিউদ্দিন-মুকিত পরিষদের জোর প্রচারণা

প্রতিদ্বদ্বী দুই প্যানেলের মধ্যে আফরোজা-মোয়াজ্জেম প্যানেলে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাছাড়া এই প্যানেলে প্রতিদ্বন্দিতাকারীরা অতীতের অন্যান্য কার্যনির্বাহী কমিটিতেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পক্ষান্তরে মহিউদ্দিন-মুকিত প্যানেলটি যাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তারা অতীতে কখনো কোনো কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেননি। এই প্যানেলে রয়েছে নতুন কিছু করার তথা সংগঠনকে বদলে দেওয়ার প্রত্যয়ী এক ঝাঁক নতুন প্রার্থী। তাই বলা যায়, এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন ও অতীতে ক্ষমতায় আসীনদের নির্বাচন। 

নির্বাচনের প্রচারকালে আফরোজা-মোয়াজ্জেম প্যানেলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ চাউর হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের নাম করে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, বিপিএমসিএর সংঘ বিধি-৫ অনুযায়ী বাৎসরিক চাঁদা ২৪ হাজার টাকা হলেও প্রতিটি মেডিকেল থেকে দুই লাখ বা তার বেশি টাকা চাঁদা আদায় প্রভৃতি।

BPMC

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোতে সর্বমোট ৪৬৭টি সিট ফাঁকা রয়েছে। এই ফাঁকা আসনে ভর্তির জন্য পোর্টাল উন্মুক্তকরণের কথা বলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠলে, চাঁদাবাজির অংশীদারের দুর্নামের ভাগীদার হওয়ার শংকা থেকেই পোর্টাল উন্মুক্ত করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিপিএমসিএর কয়েকজন সদস্য জানান, অতীতে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীরা সংগঠনের দায়িত্বে থেকে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের জন্য বলতে গেলে কিছুই করেনি। উপরন্তু তারা বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছে মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের ঘুষ দেবার নাম করে। এই ঘুষ বাণিজ্যের ফলে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে অথচ সাধারণ সদস্যরা এখনো ভুগছে বিভিন্ন সমস্যায়। সরকার বাধ্য করেছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে ভর্তির ফিস কিস্তিতে নিতে। অথচ বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা নেতৃবৃন্দ তার কোনো প্রতিকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আরও পড়ুন

কী হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সংগঠনে?

সিলেট বিভাগের এক কলেজ মালিক জানান, অ্যাসোসিয়েশনের নেত্রীবৃন্দ চাঁদাবাজি করে মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের ঘুষ প্রদানের অভিযোগ বেশ পুরানো। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন কিংবা সিট বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা আহরণ করে কিছু পরিমাণে ক্ষমতাশীলদের দিয়ে বাদবাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ঘুষের সুবিধা নিজেরা গ্রহণ করেছেন।

বিপিএমসিএর সদস্যরা মনে করছেন, চব্বিশের বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে পুরানো ক্ষমতাশীলদের কোনো জায়গা নেই। নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে নতুনেরা।

এদিকে বিগত কমিটির ১৩ জন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন মুকিত পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, ২১টি পদে নির্বাচন হবে, এই নির্বাচনে দুটি প্যানেল ভোট করছে। বর্তমান কমিটির ১৩ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিগত ১৬ বছরে সংগঠনে কোনো শৃঙ্খলা তৈরি হয়নি, বরং সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করতে হয়েছে। একই ব্যক্তি বারবার দায়িত্বে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছেন।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর