দেশে তরুণের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। আর বছরে রক্তের চাহিদা রয়েছে আনুমানিক ১০ লাখ ব্যাগ। পাঁচ কোটি তরুণের দুই শতাংশ যদি বছরে মাত্র একবার রক্ত দেন; তাহলেও বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা নিরাপদ রক্ত সরবরাহকারী দেশ হতে পারে। রক্তের অভাবে দেশের কোনো মুমূর্ষু রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে হবে না।
রোববার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি মিলনায়তনে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত তরুণ রক্তদাতা মিলনমেলা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
‘আমার রক্তে বাঁচুক শত প্রাণ’ স্লোগানকে ধারণ করে তরুণ রক্তদাতাদের ব্যতিক্রমী মিলনমেলা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। অনুষ্ঠানে তরুণ স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
এর আগে বিকেলে প্রথম পর্বে রক্তদানের অনুভূতি, মজার মজার গেম, কুইজ আর দেশের রক্তচাহিদা পূরণে তরুণ রক্তদাতাদের ভাবনা বিষয়ক বিশেষ মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। পর্বটি সঞ্চালনা করেন বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিক মোসাদ্দিক।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা জানান, ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৭ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত দিয়ে মুমূর্ষু মানুষকে ধারাবাহিক সেবা দিতে পেরেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৫ লক্ষাধিক ডোনার পুল।
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি দেশের সম্পূর্ণ রক্তচাহিদা মেটাতে তরুণদের মানবসেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক নাহার আল বোখারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের পরিচালক (মোটিভেশন) এম রেজাউল হাসান।
অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী তাসফিয়া আহমেদ। তিনি বলেন, আমার জন্মের সাত মাস পর থ্যালেসেমিয়া ধরা পরে। এরপর নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মাথা ধরা, হাত-পা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। যার একমাত্র সমাধান প্রতিমাসে দুই ব্যাগ রক্ত নিতে হয়। রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আপনাদের প্রতিদান আমি কখনই শোধ করতে পারব না।
সভায় ১৮বার রক্তদাতা আজিমা ইসলাম রুবা বলেন, প্রথমবার রক্ত দেওয়ার আগে ভয় পেয়েছিলাম। রক্ত দেওয়ার পর এত ভালো লেগেছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এটি স্বর্গীয় আনন্দ। কারণ রক্তদাতাদের কারণে অসংখ্য মুমূর্ষু মানুষ বেঁচে থাকেন।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির মুনির হাসান বলেন, জীবনের প্রতিটি স্তরে মানুষের মঙ্গল কামনা করতে হবে। মানবতার কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণদের ভালো ভালো কাজ করতে হবে।
নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন চমৎকার কাজ করছে। তরুণদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিনামূল্যে রক্তদান করছে। মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাদের এই কাজের কোনো বিনিময় হয় না। তারুণ্য শুধু রক্তদান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা সমাজের যেকোনো সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
এসএইচ/এফএ

