রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেশে চার কোটি ৫০ লাখ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২৫, ১২:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশে চার কোটি ৫০ লাখ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত

দেশে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষ লিভার সিরোসিস বা ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটভিত্তিক খাবার গ্রহণ, হাঁটাচলার অভাব এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের অভাবে এই রোগ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘কম খাই, হাঁটি বেশি-ফ্যাটি লিভার দূরে রাখি’ প্রতিপাদ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অষ্টম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে উপলক্ষে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো অধ্যাপক (অব.) মেজর জেনারেল ডা. এএসএম মতিউর রহমান এবং প্রধান বক্তা ছিলেন বারডেম হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. গোলাম আযম।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফ্যাটি লিভার এখন ভাইরাসজনিত প্রদাহকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি শুধু লিভারের প্রদাহই সৃষ্টি করে না বরং ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তারা জানান, বাংলাদেশে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই রোগ বিপজ্জনক পর্যায়ে গিয়ে ন্যাশে পরিণত হয়, যা লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো অধ্যাপক ডা. এএসএম মতিউর রহমান বলেন, একটি ভয়ংকর বিপর্যয় সামনে দাঁড়িয়ে আছে-আমরা দেখছি ফ্যাটি লিভার ভাইরাল হেপাটাইটিসকেও ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আমরা এখনও ফ্যাটি লিভারকে ‘সাইলেন্ট ডিজিজ’ মনে করে অবহেলা করছি। এটি শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়, এটি অর্থনীতি, সমাজ ও পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার সমস্যা।

তিনি বলেন, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে মাল্টি-সেক্টরাল অ্যাপ্রোচ দরকার। শুধু চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়ে এটি সম্ভব নয়।

খাদ্যনীতি, নগর পরিকল্পনা, শিক্ষা ব্যবস্থা-সব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। শিশুদের স্কুলে খেলার সুযোগ না থাকলে তারা বড় হয়ে স্থূলতা ও লিভার রোগে আক্রান্ত হবেন। বারডেম হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ও প্রধান বক্তা ডা. মো. গোলাম আযম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাটি লিভারকে হালকা করে দেখেছি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, এই একটি রোগ ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এমনকি ক্যানসারের শেকড় তৈরি করছে। সমস্যা হচ্ছে ৯০ শতাংশ রোগী জানেই না তাদের এই রোগ আছে। কারণ কোনো লক্ষণ থাকে না। যখন বুঝতে পারে, তখন লিভার অনেকটাই নষ্ট।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজনের ফ্যাটি লিভার রয়েছে। যারা দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, বাইরের খাবার খান, হাঁটাচলা করেন না- তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমরা রোগ হলে চিকিৎসা খুঁজি, কিন্তু এখন সময় প্রতিরোধে বিনিয়োগ করার।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহিনুল আলম আরও বলেন, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস থেকে বাসা-সবখানে হাঁটার ব্যবস্থা না থাকলে, খেলাধুলার পরিবেশ না থাকলে শুধু ওষুধ বা সচেতনতা দিয়ে কিছু হবে না। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম যেন ওজন নয় স্বাস্থ্যকে মূল্য দেয়। এ জন্য পলিসি লেভেলে পরিবর্তন দরকার।

তিনি বলেন, পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য করতে হবে। ট্রান্স ফ্যাট, চিনি, লবণ বেশি এমন খাবারকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে হবে তারা যেন শুধু মুনাফার জন্য বিষ বানিয়ে না ছাড়ে।

সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা দিনে অন্তত ৫ ঘণ্টা বসে থাকেন, বাইরের ভাজা খাবার খান এবং দেহচর্চা কম করেন, তাদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে যারা বেশি পরিমাণে ভাত ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার খান কিন্তু পর্যাপ্ত হাঁটাচলা করেন না-তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধই প্রধান চিকিৎসা। মাত্র একটি পরীক্ষা করেই এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার অভাবে দেশের লাখ লাখ মানুষ জানেই না, তাদের লিভার ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ রূপ নিতে বাধ্য।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, ডা. তানভির আহমাদ, ডা. আবু হেনা আবিদ জাফর, ডা. এসকে বাহার হোসেন, ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রফেসর ফিরোজ আমিন, মো. মাসুদ আলম, সাংবাদিক তুষার আবদুল্লাহ ও গায়ক আগুনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনরা।

এসএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর