করোনা ভাইরাস যেন শুধুই পেছনের গল্প— এমনটাই ধরে নিয়েছিল দেশের মানুষ। কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আবারও করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। একইসঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী। করোনার নতুন ঢেউ নিয়ে জনমনে উঁকি দিচ্ছে নানা প্রশ্ন। যদিও এখন পর্যন্ত প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার কথা বলছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
করোনার বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, ছাত্র, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে। ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিল্যান্স মেডিকেল অফিসার ডা. সায়মা আলমগীর ঢাকা মেইলকে বলেন, করোনা নিয়ে প্যানিক সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো মহামারীর ক্ষেত্রেই আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। আর করোনার পাশপাশি ডেঙ্গু নিয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আর যেকোনো মহামারীকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু গোষ্ঠী যে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করে; সে বিষয়েও আমাদেরকে আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। একইসঙ্গে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেলে ঘরে বসে না থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, বিগত সময়ে করোনার ভয়ংকর যে রূপ তা পুরো জাতিকে একটা সময় মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছিল। আমরা নার্সরা মুমূর্ষু রোগীর খুব কাছে থেকে, পাশে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীর সেবা ও মনোবল ধরে রাখতে কাজ করেছি। করোনা যদি নতুন করে চোখ রাঙায় তা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং। আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিফ রিয়াদ বলেন, করোনা মহামারী আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা। একইসঙ্গে একটা সুন্দর-পরিচ্ছন্ন লাইফস্টাইলেরও শিক্ষা দিয়েছিল। এখন করোনার প্রকোপ বাড়লেও মহামারী আকার ধারণ করেনি। সুতরাং এটা নিয়ে এত উদ্বেগের কিছু নেই। তবে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
কলেজ শিক্ষার্থী মো. আব্দুল আলিম বলেন, আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার ঢেউ মোকাবিলা করা সম্ভব। আমরা বিগত সময়ে যে স্বাস্থ্যবিধিগুলো রপ্ত করেছিলাম, তা ভুলতে বসেছি। আবারও সেগুলোর চর্চা শুরু করতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক ইমরান মাহফুজ ঢাকা মেইলকে বলেন, যেকোনো সংকটকালে গুজব কিংবা ভুল তথ্য ছড়ানোর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কিছু হতে পারে না। করোনা নিয়েও নানা বিভ্রান্তিকর তথ্যের ছড়াছড়ি আমাদেরকে জানতে হবে, এমন অবস্থায় কি করা উচিত। আর কি করা যাবে না। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানতে হবে। করোনা নিয়ে এখনও ভয়ের কোনো খবর নেই। তবে সর্তক থাকতে হবে।
পরিবহন শ্রমিক সালাউদ্দিন হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, করোনার প্রকোপ নিয়ে অনলাইনে নানা রকম তথ্য পাচ্ছি। কিছু কিছু তথ্য তো ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার যদি প্রকোপ বাড়ে, লকডাউনের মতো কর্মসূচি আসে, এগুলোই চিন্তার বিষয়। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাই। কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধা তৈরি করে, এমন কোনো পদক্ষেপ চাই না।
দিনমজুর আফজাল হোসেন বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। বিগত সময়ে করোনার কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। নতুন করে এই ক্ষতির মুখে পড়তে চাই না। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানব। কিন্তু আমাদের রুজি-রুটিতে যেন বাধা তৈরি না হয়, সেই প্রত্যাশা থাকবে।
মাওলানা শাহাদাত হোসনে বলেন, করোনার কারণে বিগত সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েও সরকারের কড়া নির্দেশনা মানতে হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করি, জাতির ওপর এমন কোন মহামারী যেন আর না আসে। আর করোনা যেহেতু আমাদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিদায় নেয়নি, আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো মানতে হবে।
এমআই/এফএ

