ঈদের আয়োজনে দেশবাসী যখন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে, ঠিক একই সময়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ছুটছেন অনেকে। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে। এছাড়া কোরবানির আয়োজন করতে গিয়ে পশুর লাথি-গুতা কিংবা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেকে আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একাধিক আঘাত ও হাড় ভেঙে যাওয়ার কিংবা কেটে গিয়ে বড় ক্ষতের সৃষ্টির ঘটনাও ঘটেছে অনেক। ছোট ছোট আঘাত ও ক্ষতের ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু হাড় ভেঙে যাওয়া কিংবা বড় ধরনের ক্ষতি হওয়া ব্যক্তিদের ছুটতে হচ্ছে হাসপাতালে। এ অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানোর পরও রোগীর ভিড়ে অনেকেরেই চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ঈদ আনন্দে সবাই মেতে থাকলেও দুর্ঘটনার শিকার কিংবা অসুস্থদের জীবনে হাসি নেই। চিকিৎসাসেবা পর্যাপ্ত না হওয়ায় নীরব কান্না হাসপাতালে আগত রোগীদের। এ কারণে হাসি-আনন্দ ভুলে যন্ত্রণা আর অশ্রু সহ্য করে কাটাতে হচ্ছে ঈদের দিন।
এবার ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ফলে এই ঈদে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে প্রায় সবার মাঝে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মতো জায়গায় শান্তির পরিবর্তে অশান্তি। হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জরুরি সেবার চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে। আর ভোগান্তি বেড়েছে রোগীদের।
এদিকে অন্যান্য বারের মতো এবারও চিকিৎসাসেবার সংকট গুরুত্ব বুঝতে পেরে এগিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ইতোমধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মূলত ঈদের ছুটি যেন রোগীদের জন্য কষ্টে পরিণত না হয়, সে জন্যই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান নির্দেশনাসমূহ সংক্ষেপে—
বিজ্ঞাপন
- জরুরি বিভাগে ডিউটিতে চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, প্রয়োজনে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।
- লেবার রুম, জরুরি অপারেশন থিয়েটার ও ডায়াগনস্টিক ল্যাব ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে।
- ঈদের আগে-পরে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত জনবল বজায় থাকে।
- প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জনস্বার্থ ও জরুরি সেবার ধারাবাহিকতা বিবেচনায় রেখে ছুটি অনুমোদন করতে হবে।
- জেলা পর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে এবং সিভিল সার্জন বা বিভাগীয় পরিচালকদের আগেই জানাতে হবে।
- বিভাগীয় প্রধানদের প্রতিদিনের কার্যক্রম তদারকি করতে হবে এবং এক্স-রে ও ল্যাবসহ গুরুত্বপূর্ণ ডায়াগনস্টিক সেবাসমূহ সচল রাখতে হবে।
- জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, স্যালাইন, রিএজেন্ট ও সার্জিকাল সরঞ্জামের পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে।
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সর্বদা সচল রাখতে হবে।
- হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাধ্যতামূলক।
- অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডিউটিরত স্টাফদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকতে হবে এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হবে।
- যদি প্রধান কর্মকর্তা ছুটিতে থাকেন, তাহলে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে এবং তার যোগাযোগে তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
- ঈদের দিন ভর্তি রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে তা বিতরণ নিশ্চিত করবেন।
- বহির্বিভাগ (ওপিডি) ৭২ ঘণ্টার বেশি বন্ধ রাখা যাবে না — কিছুটা নমনীয়তা রাখা হলেও মূল নিয়মটি বজায় থাকবে।
বেসরকারি হাসপাতালের জন্য নির্দেশনা:
- নিবন্ধিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি ও মাতৃত্বসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রয়োজনে রেফারকৃত রোগীর জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কোনো জরুরি অবস্থা বা দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ডিজিএইচএসকে জানাতে হবে।
এফএ

