উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবার পাশাপাশি রোগ নির্ণয় সেবা চালু করতে হবে। একই সঙ্গে সচল রাখতে হবে রক্ত সঞ্চালন বিভাগের কার্যক্রম। আর তা নিশ্চিতে সৃষ্টি করতে হবে জনবলের প্রয়োজনীয় পদ। এতে বেকার প্রায় ৪০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ কম খরচে রোগ নির্ণয়ের সুযোগ পাবেন। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
বিশ্ব ল্যাবরেটরি দিবস উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব দাবি করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারা দিন ল্যাবগুলো চালু থাকলে অধিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এতে মেশিনারিজ সর্বাধিক ব্যবহৃত হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই রিএজেন্ট ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আর শুরুতেই নির্ণয় করা গেলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে যাবে।
স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২৪ ঘণ্টা রোগ নির্ণয় সেবা চালুর পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাইন ডিরেক্টর (হাসপাতাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট) ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো। তিনি বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সেবা চালু রাখা উচিত। ল্যাবগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে ফেলা উচিত। জরুরি বিভাগে একটি ল্যাব থাকবে, যেখানে রোগী আসার সাথে সাথে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে, এতে পাঁচ মিনিটেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এর সুবাদে রোগী দ্রুত ফলাফল পাবে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে সকাল ও বিকেল মিলিয়ে ১৬ ঘণ্টা এবং অন্তর্বিভাগে প্রতি ফ্লোরে একটি করে ল্যাব ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা উচিত।
এ সময় গ্রামে রক্ত সঞ্চালন বিভাগ চালু করা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক উপজেলায় ১/২টি করে ব্লাড ব্যাংক থাকা দরকার। রোগ নির্ণয়ের জন্য শুধু মেশিন থাকলেই হয় না, দক্ষ টেকনোলজিস্টও প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, সরকার হাসপাতালগুলোর উপার্জিত অর্থ নিজেরা ব্যবহারের অনুমতি দিলে অনেক হাসপাতাল নিজেদের ব্যয় চালাতে পারবে, উল্টো রাজস্ব আয়ও সম্ভব। এটি এক ধরনের আত্মনির্ভরতা তৈরি করবে।
বিজ্ঞাপন
এ সময় ল্যাবে নানা রকম জীবাণু ও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ঝুঁকি ভাতা কার্যকর এবং রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য ডিপ্লোমাধারীদের মতো দশম গ্রেডের মর্যাদা প্রদান করে বৈষম্যমুক্ত করারও দাবি করেন তারা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা হাই টেক মেশিনারিজ ও রোগীর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে গিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ করেন। এ অবস্থায় তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলে কাজের গুণগতমান বাড়বে।
একই সাথে গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মেডিকেল ল্যাবরেটরি সাইন্টিফিক অফিসার বা কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের দাবি জানান তারা। বলেন, এতে পরীক্ষার মান নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবেন তারা, যা বর্তমানে সরকারি কাঠামোতে নেই। তারা বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় সুপারভাইজার আছে, কিন্তু ওয়ার্কিং অফিসার নেই। এ অবস্থায় ল্যাবসমূহের জন্য সেন্ট্রাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল অথরিটি সৃষ্টি করে রোগ নির্ণয় ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা উপেক্ষিত মন্তব্য করেন তারা বলেন, রোগীদের সুস্থতায় চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রোগ নির্ণয়, যার নেপথ্য নায়ক মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। কোভিডের সময় জীবনকে তুচ্ছ করে রোগীদের জীবন বাঁচাতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন তারা। তবে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত তাদের পেশা।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টের সভাপতি মো. সোহেল রানার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মো. আব্দুল আউয়াল।
আলোচনায় অংশ নেন নিপসম পরিচালক ডা. জিয়াউল ইসলাম, আইএইচটি ঢাকার অধ্যক্ষ ডা. মুজিব উদ্দিন, সাইক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবু মু ইয়াহইয়া হোসেন, জাতীয় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ এবং ইউকে শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
এসএইচ/এএস