মেডিকেল কলেজ আইনের সামনে থেকে বেসরকারি শব্দ তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর আগারগাঁয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এক্সপো-২০২৫ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে মেডিকেল কলেজের আইনের সামনে থেকে বেসরকারি শব্দটি তুলে দিতে বলেছি। মেডিকেল কলেজ মানে মেডিকেল কলেজ। একই আইন। সরকারি হোক, বেসরকারি হোক; এখান থেকে পাস করার পর শিক্ষার্থীরা ডাক্তার হন। ডাক্তার দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন। অতএব, মেডিকেল কলেজের আগে মালিকানার প্রশ্ন নিয়ে আইনের পার্থক্য জরুরি না।
মানহীন বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব হাসপাতালের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই, সেসব হাসপাতালের সেবাদান করা নৈতিকভাবে সিদ্ধ নয়। বেসরকারি হাসপাতালের মান বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট ৮০-৯০ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আশা করি, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন। বাংলাদেশে যেসব ল্যাবরেটরি রয়েছে। চাইলে তারা আরও ইকুইপমেন্ট বানাতে পারে। রি-এজেন্ট বানাতে পারে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ একটি আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগের অন্যতম খাত হলো স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যখাতে কেন প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে? কারণ মুনাফা বেশি। জনবলের কারণে স্বাস্থ্যখাতে নির্ভরশীলতাও বেশি। সম্ভাবনাময় খাত স্বাস্থ্য।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের বিষয়ে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, প্রায় সময় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয় সরকারি-বেসরকারি উভয়ই। সরকারি বেশি, আর বেসরকারি কম। কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা দেশের পুরো স্বাস্থ্য কাঠামোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে একটি সুন্দর আইন থাকা প্রয়োজন, সম্ভবত এটি দুইভাগে করা হচ্ছে- প্রভাইডারের দিক থেকে এবং কনজ্যুমারের দিক থেকে। বিষয়টি স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের হাতে রয়েছে।
হাসপাতালে ফার্মেসির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার একটি উদাহরণ তৈরি করার চেষ্টা করছে। হাসপাতালের সাথে একটি ফার্মেসি তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালেও যেন একটি হাসপাতাল ফার্মেসি থাকে। আর এটি যেন ওষুধের দোকান না হয়ে উঠে; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে মেলায় চীন, জাপান, পাকিস্তান, ভারত, কোরিয়া ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় দুই শতাধিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট প্রস্তুতকারক কোম্পানির পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে মাথাপিছু খরচ দাঁড়াবে আনুমানিক ৬০ ডলার। যা ২০২০ সালের তুলনায় ১৭.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে ২০২২ সালে মোট হাসপাতালের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮১৬টি। ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা ছিল ২৪টি। বিশেষায়িত ক্লিনিকের সংখ্যা ছিল ৬৪টি, ট্রমা সেন্টারের সংখ্যা ছিল ৬টি, আইসিইউ সুবিধার সংখ্যা ছিল ৩৫টি, যার মধ্যে ৪৯৮টি শয্যা ছিল। সিসিইউ সুবিধার সংখ্যা ছিল ২৮টি, যার মধ্যে ৪৭১টি শয্যা ছিল, ডায়ালাইসিস সুবিধার সংখ্যা ছিল ১৪টি, যার মধ্যে ২৬৩টি শয্যা ছিল। বাংলাদেশে এনআইসিইউ/এসসিএএনইউ সুবিধার ৭টি এবং ১৩৫টি শয্যা ছিল।
জানা গেছে, গত দুই দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটেছে। নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ১ হাজার ১২৫ থেকে ৪ হাজার ৪৫২ তে পৌঁছেছে। ক্লিনিকগুলির সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১১ থেকে বেড়ে ১৩৯৭, ডেন্টাল ক্লিনিকগুলি প্রায় সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১২২ থেকে ৮৩৯টি হয়েছে। অন্যদিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৭৭৮ থেকে বেড়ে ১০ হাজার ২৯১টি হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিবছর চিকিৎসা ব্যয় আনুপাতিক হারে বাড়ছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ছিল ৫১ ডলার, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬.২৯% বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বায় ছিল ৪৮ ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৬.৫৩% বেশি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বায় ছিল ৪৫ ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৫.৮৪% বেশি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ছিল ৪২ ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৬.৮৭% বেশি। প্রতিবছর এভাবেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বাড়ছে।
এই মেলায় সেমিনার এবং নির্মাতাদের সাথে সরাসরি ব্যবসায়ী থেকে ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ী থেকে কাস্টমার যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা ডায়াগনস্টিক চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ও এর ব্যবহার এবং নবনির্মিত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন, সাথে বাজার সম্ভাবনাও প্রসারিত হবে।
আয়োজকদের মতে, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এক্সপো-২০২৫’ হলো সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি, সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সেক্টরের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং প্রযুক্তিতে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেওয়ার যাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই মেলা চলমান থাকবে।
এসএইচ/এফএ

