সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ন্যুনতম ৯ টাকা করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ন্যুনতম ৯ টাকা করার আহ্বান

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়ানো হলেও মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় তা নগণ্য। এতে সিগারেট আগের তুলনায় সহজলভ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এ অবস্থায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটের প্রতি শলাকার দাম ন্যুনতম ৯ টাকা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এ আহ্বান জানান।


বিজ্ঞাপন


আলোচকরা বলেন, সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে সিগারেটের দাম অল্প করে বাড়ানো হলেও অন্য নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির তুলনায় তা নগণ্য। তাই সিগারেটের সহজলভ্যতা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে। তবে এই দামবৃদ্ধির পরও সবচেয়ে সস্তা সিগারেটের একটি শলাকা ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিগারেটের সহজলভ্যতা কমাতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এক শলাকা সিগারেটের দাম অন্তত ৯ টাকা ধার্য করতে হবে।

সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের অর্ধেক অতিক্রান্ত হওয়ার পর সিগারেটের দাম গড়ে ১৭.৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অর্থবছরের শুরুতেই সিগারেটের দাম এই মাত্রায় বাড়ালে আরও বেশি সুফল পাওয়া যেত বলে দাবি করেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, সিগারেটসহ অন্যান্য তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ করতে না পারায় সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব আহরণের সুযোগ হারিয়েছে, অন্য দিকে নিম্নআয় শ্রেণির নাগরিক। কিশোর-তরুণদের কাছে সিগারেটের সহজলভ্যতাও কমানো সম্ভব হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, বর্তমানে বাজারে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ, ও অতি উচ্চ- এই চার স্তরের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। আসন্ন অর্থবছরে নিম্ন ও মধ্যম- এই দুটি স্তরকে একীভূত করে একটি নতুন স্তর তৈরি করে মোট স্তরের সংখ্যা তিনটিতে নামিয়ে আনলে কর আহরণের দক্ষতা বাড়বে।


বিজ্ঞাপন


এই নতুন তিন স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটির দাম যথাক্রমে ৯০ টাকা, ১৪০ টাকা, ও ১৯০ টাকা ধার্য করার প্রস্তাব করেছে দেশের তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলো। এই প্রস্তাবনা আগামী বাজেটে প্রতিফলিত করা গেলে ২৪ লক্ষের বেশি নাগরিককে ধূমপান ত্যাগ করানো যাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ১৭ লক্ষের বেশি অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে বলেও মত তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজানা করিম বলেন, নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রস্তাবনা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ানো গেলে সিগারেটের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার (৬৭ শতাংশ) অপরিবর্তিত রেখেই আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। আর সম্পূরক শুল্ক হার বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করলে বাড়তি রাজস্বের অনুপাত ৪৫ শতাংশ করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন যে, সিগারেটের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। তামাকপণ্য বিক্রি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ।

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলম। এতে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।

এমএইচ/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর