বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে এবং তাদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। এই পরিস্থিতিতে এনজিওগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেহেতু তারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে কাজ করার সুযোগ পায়। এনজিওগুলোকে আহতদের চিকিৎসা সেবা এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর এনজিও ব্যুরোর উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য সেবায় এনজিওর সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৮৭৩ জন শহীদ হয়েছেন এবং ২১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে এনজিওগুলো যেহেতু দেশের আনাচে-কানাচে কাজ করতে পারে, তারা আহতদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে কষ্ট ভোগ করছেন। বিশেষত যারা রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করতেন, এখন পা হারিয়ে আয় রোজগারের সুযোগ হারিয়েছেন। তাদের পুনর্বাসনের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ২১ হাজার আহতের মধ্যে ৪০ জন এমন মানুষ আছেন যারা দুই চোখ হারিয়েছেন। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানসিক সমর্থন প্রদান করা। তাদের ভবিষ্যত কী হবে? তারা আমাদের সন্তানদের মতো। আমি যদি চোখ বন্ধ করে দেখি, আমি কীভাবে দুনিয়া দেখব? কাজেই, আমাদের এদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এনজিওগুলোকে আরও বলেন, "এই আহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষ, যেমন রিকশা, ভ্যানগাড়ি চালক এবং শিক্ষার্থী। তাদের পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এনজিওগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।"
তিনি দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান কিছু সংকট এবং চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন। যেমন মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, বাল্যবিয়ে, এবং শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া। এসব বিষয়ে এনজিওগুলোর সঙ্গে সরকারের সমন্বয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, তবে যদি সবাই সচেতন হয়, তাহলে আর একজনও ডেঙ্গুতে মারা যাবে না। আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বদ্ধ পানি জমে থাকা, যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, “সিগারেট, ই-সিগারেট এবং তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে। সরকার সব কিছু একদিনে পরিবর্তন করতে পারবে না, তবে যদি আমরা সবাই একে অপরকে সহযোগিতা করি, তাহলে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।”
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সভায় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাজ করা বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
এমএইচ/এইউ

