আন্দোলনের মুখে বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ করেছে সরকার। এ অবস্থায় বয়সসীমা আগে থেকে ৩২ থাকা চিকিৎসকরা তা বাড়িয়ে ৩৪ করার দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জেনারেল সার্জারি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনায় অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনা করে বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়স ৩৪ বছর করার বিষয়ে সমাধানের উদ্যেগ নেওয়া হবে। আর এতে পিএসসির কোনো আপত্তি নেই।
এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের বয়স বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের কাছে চিঠি দেন চিকিৎসকরা। এতে এমবিবিএস চিকিৎসকদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী, ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতি, ডা. গোলাম ছামদানী, ডা. আব্দুল হাকিম ও ডা. রুহুল আমিন।
চিকিৎসকদের আবেদনপত্রে বলা হয়, আমরা দেশের সাধারণ এমবিবিএস চিকিৎসক। আমরা জেনেছি ৪৭তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপনে সব আবেদনকারীর বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করা হয়েছ, যা বিপ্লবোত্তর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদার ও বৈষম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক এবং সরকার এই কারণে আপামর নবীন এবং প্রবীণের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, অন্যান্য বিসিএস আবেদনকারীর স্নাতক শেষ করতে যেখানে ন্যূনতম ৪ বছর লাগে সেখানে সব চিকিৎসকের এমবিবিএস স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে ন্যূনতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর লাগে, তাই পূর্ববর্তী সব সাধারণ বিসিএস আবেদনকারীদের যেখানে বয়সসীমা ৩০ বছর ছিল সেখানে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ ছিল। তাই একই কারণে উদার ও বৈষম্যহীন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা পূর্বের ন্যায় ২ বছর বৃদ্ধিপূর্বক ৩২ এর পরিবর্তে ৩৪ করার আবেদন করছি।
এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বয়স বাড়ানোর দাবি জানান চিকিৎসকরা। সমাবেশে চিকিৎসকরা বলেন, সম্প্রতি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করা হলেও সুবিধা বাড়েনি চিকিৎসকদের। কারণ চিকিৎসকদের বয়সসীমা আগে থেকেই ৩২ বছর নির্ধারণ করা ছিল। এখনও ৩২ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অতিরিক্ত সময় চাওয়ার পেছনে চিকিৎসকদের যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, এমবিবিএস কোর্স ৫ বছরের। এর সঙ্গে ইন্টার্ন ১ বছরের করতে হয়। এর পর রেজাল্ট আসতে আরও প্রায় ৬ মাস লাগে। সবমিলিয়ে একজন চিকিৎসকের গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করতে ৬ বছর থেকে সাড়ে ৬ বছর লেগে যায়। দেখা যায়, একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর যেখানে গ্র্যাজুয়েশন করতে ৪ বছর লাগে, সেখানে একজন চিকিৎসকের গ্র্যাজুয়েশন করতে ২ থেকে আড়াই বছর বেশি লাগে। এই অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে, বিসিএসের জন্য পূর্বে যে ২ বছর বাড়তি সময় দেওয়া ছিল। বর্তমানে অন্য সবার ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ করা হলেও, চিকিৎসকদের আগের মতোই ৩২ বছর রয়ে গেছে। এ কারণে অতিরিক্ত সময় বাড়ানোর সুবিধা অন্যরা পেলেও, চিকিৎসকরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, দেশের মেডিকেলের পড়ালেখার সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের অনেক দূরত্ব রয়ে গেছে। যেখানে একজন সাধারণ স্টুডেন্ট অনার্সে ভর্তির পর থেকেই বিসিএস পরীক্ষার প্রিপারেশনের সুযোগ পায় অথবা তার পড়ালেখার ধরনটা বিসিএস পরীক্ষার সঙ্গে মিল থাকে। কিন্তু এমবিবিএস পড়ালেখা সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ায়, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বাড়তি পড়ালেখা করে বিসিএস প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে বয়সের সীমাবদ্ধতা। এসব কারণে পূর্বের মতো জেনারেল ক্যাডারের চাইতে টেকনিক্যাল ক্যাডার স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত ২ বছর সময় বাড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে জোর দাবি জানান চিকিৎসকরা।
এমএইচ/এমএইচএম

