মৌসুম শেষেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে ঢাকাবাসী রেহাই পাচ্ছে না। ২ নভেম্বর, একদিনে সর্বাধিক ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে ৩১৪ জন মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে—এখানে মৃতের সংখ্যা ১৪৭।
স্বাস্থ্য অধিদফতর আগেই সতর্ক করেছিল যে রাজধানীর দুই সিটিতে ১৮টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন— নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞাপন
দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। প্রশাসক নিয়োগের পর নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যক্রম কার্যকর হচ্ছে না। বাসা-বাড়ি, অফিস—সব জায়গায় মশার অত্যাচার অব্যাহত। কিছুতেই মশা ঠেকানো যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে গেছে, চিকিৎসার জন্য জায়গা পাচ্ছে না অনেকে।
গত ৫ আগস্ট থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা অফিস করছেন না। এতে মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। নগরবাসী অভিযোগ করছেন, প্রতি বছর শত কোটি টাকা খরচ করেও মশার কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটিতে ১৮টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ৩০৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, আগে মেয়র ও কাউন্সিলররা নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি করতেন, কিন্তু বর্তমানে কোনো কাউন্সিলর না থাকায় অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই।
বিজ্ঞাপন
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান নিয়ে গরমিল রয়েছে এবং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে মশক নিধনে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন সতর্ক করেছেন, এবারের মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। তারা মশা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ভুল তথ্য প্রদান করছে, যা তাদের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছে। তিনি জানান, তারা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
মোটকথা, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এখনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আতঙ্ক ও প্রাণহানি বাড়তে পারে।
এইউ