শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ঋতু পরিবর্তনজনিত জ্বর-সর্দির প্রকোপ সারাদেশে

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

সর্দি-কাশি, স্বরভঙ্গে নাকাল দেশবাসী

কার্তিকের মাঝামাঝিতে দিনে গরম ও শেষ রাতে অল্প ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে সারাদেশে। রাজধানীতে শীতের এ আগমনী বার্তা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হলেও নগরের বাইরে তা দৃশ্যমান। এদিকে দেশজুড়ে শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই জ্বর এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার পুরো পরিবারসহ জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন।

রাজধানীর কাজলার বাসিন্দা সানজিদা ইসলাম (ছদ্মনাম)। দিন রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের প্রভাবে চারদিনেরও বেশি সময় ধরে তিনি জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের অ্যাজমা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে তার। তিনি একা নন, তার পরিবারের আরও তিনজন সদস্য ভুগছেন জ্বর ও সর্দি-কাশিতে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমার অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে। প্রায় প্রতি বছর এ সময়ে তা ভায়নক আকার ধারণ করে। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাথে সর্দি ও জ্বর। এদিকে আমার জ্বর আসার পরপরই আমার মেয়ে, জা এবং তার ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। জ্বরের মাত্রা কম হলেও সর্দি-কাশিতে সবার নাজেহাল অবস্থা।


বিজ্ঞাপন


একই অবস্থা মগবাজারের বাসিন্দা রাকিব হাসানের। সর্দি-কাশিতে নাকাল অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গতমাসের শুরুতে আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। মাসের মাঝামাঝিতে সুস্থ হয়েছি। এখনও শরীর কিছুটা দুর্বল। মাঝে কয়েকদিন ভালো থাকলেও গত দুদিন যাবত তীব্র সর্দিতে ভুগছি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে রাতে শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পাশাপাশি খুসখুসে কাশি। ডেঙ্গুর প্রভাব ও সাম্প্রতিক সর্দি-কাশিতে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) -এর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শীতকালে এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেড়ে যায়। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত গুরুতর অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে আসা রোগীর মধ্যে ১৫-২৬ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল।

শীত ও পূর্ববর্তী সময়ে বাড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাব


বিজ্ঞাপন


চিকিৎসকদের মতে, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ডাটা থেকেও এর সত্যতা লক্ষ্য করা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) -এর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শীতকালে এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেড়ে যায়। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত গুরুতর অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে আসা রোগীর মধ্যে ১৫-২৬ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল।

২০২০ সালের কোভিড মহামারির কারণে, রোগ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আসে। সে সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তের একটি স্পাইক লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে, মহামারির কারণে এ সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ আগের বছরগুলোর চেয়ে কিছুটা কম ছিল। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে সাধারণত সপ্তাহ ভিত্তিক এপিডেমিক থ্রেশহোল্ড পরিমাপ করা হয় যা সংক্রমণের স্তর নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একে মধ্যম, উচ্চ এবং খুবই উচ্চ সংক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছরেও সর্দি, কাশি এবং জ্বরের মতো মৌসুমী রোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যাচ্ছে।

সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ঋতু পরিবর্তন স্বাভাবিক ঘটনা। আর এ সময়ে সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লো-এর সংক্রমণ ঘটে। তাই সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। রাজধানীসহ সারাদেশেই বায়ু দূষণ রয়েছে। ফলে অসুস্থতা ছড়াচ্ছে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিক ভুগছেন। তাই অপ্রয়োজনের বাইরে যাওয়া যাবে না। সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের সমস্যা বয়স্ক ও শিশুদের জটিল আকার ধারণ করতে পারে। শিশুদের এ সময় বুকে ভাইরাল ইনফেশন দেখা দেওয়া সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তাদের পরিস্থিতিও জটিল হতে পারে। ধূমপায়ীরাও অধিক ঝুঁকিতে থাকেন। এ ধরনের অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

এছাড়া ডেঙ্গুর বিষয়েও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন প্রখ্যাত এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর