সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা পাবেন ৬২ লাখ কিশোরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা পাবেন ৬২ লাখ কিশোরী
ছবি: সংগৃহীত

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকার বিশেষ ক্যাম্পেইন করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এর মাধ্যমে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য সরকারের।

সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এইচপিভি টিকার বিশেষ ক্যাম্পেইন সংক্রান্ত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) উপ-পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগে দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর এইচপিডি টিকাদান ক্যাম্পেইন আগামী ২৪ অক্টোবর ঢাকা ছাড়া সাতটি বিভাগে শুরু হতে যাচ্ছে। এই ক্যাম্পেইন চলবে মোট চার সপ্তাহ। এর আগে ২০২৩ সালে ঢাকা বিভাগের ১৫ লাখেরও বেশি কিশোরীকে এক ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে। এতে কোনো কিশোরীর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

কারা টিকা পাবেন সেই তথ্য তুলে ধরে ডা. সাজ্জাদ বলেন, স্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা বিনামূল্যে এই টিকা পাবে। এক ডোজের টিকার ক্যাম্পেইন চলবে ১৮ দিন। এই ক্যাম্পেইনে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য আমাদের। এই মুহূর্তে সরকারের হাতে টিকার মজুত রয়েছে ৭৯ লাখ ৪৭৮ লাখ।

তিনি বলেন, এ ভ্যাকসিনটির নাম সার্ভিক্স (জিএসকে), যা বেলজিয়ামে তৈরি। প্রতি ভায়ালে ডোজ সংখ্যা ২টি। ভ্যাকসিনটি +২° সে. থেকে +৮° সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী দেশের ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপ অব এক্সপার্ট (নাইট্যাগ) কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৬-১৭ সালে এইচপিডি টিকাদান কার্যক্রমের পাইলটিং হিসেবে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া, শ্রীপুর উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন জোন-০১ এর ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ও ১০ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কিশোরীদের এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা বিভাগে ২০২৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে যেখানে প্রায় ২০ লাখ কিশোরীর মাঝে ১৫ লক্ষাধিক কিশোরীকে ১ ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয় যা উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৫%। মাইক্রোপ্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা টিকাদান কেন্দ্রে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের অভিজ্ঞতার আলোকে অবশিষ্ট ৭টি বিভাগে অক্টোবর-নভেম্বের ২০২৪ সালে এইচপিভি ক্যাম্পেইন শুরু হতে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


নিবন্ধন প্রসঙ্গে ডা. সাজ্জাদ বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে। এরইমধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত রোববার এক দিনে দুই লাখের বেশি কিশোরী নিবন্ধন করেছেন।

এছাড়া শুরুতে এ কার্যক্রম সাতটি বিভাগের নির্দিষ্ট বয়সী ও নির্ধারিত শ্রেণীতে অধ্যয়নরত কিশোরীরা www.vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে টিকাকার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। পরে ওই কার্ড দেখিয়ে টিকার ডোজ গ্রহণ করা যাবে।

ইপিআই কর্মসূচির ডিপিএম ডা. রাজিব সরকার জানান, সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়া থেকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫-২০ বছর সময় লাগে। এমন কি এইডস আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত হতেও ৫ থেকে ১০ বছর লাগে। এজন্য এই রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়। আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই প্রায় শেষ পর্যায়ে শনাক্ত হন যখন রোগ থেকে সেরে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কিশোরীদের নির্দিষ্ট বয়সে এক ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদান করলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ইপিআইয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৮৩ জনকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। অর্জন হয় ৭৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা। দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সুফী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. নজরুল ইসলাম। কর্মশালায় এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ইপিআই কর্মসূচির ডিপিএম ডা. রাজীব সরকার। এই ক্যাম্পেইনে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। এছাড়া কর্মশালায় ইউনিসেফের প্রতিনিধি ব্রিজেট জব জনসন বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুমুখ ক্যানসার। নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেসবের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসার বৈশ্বিকভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশি নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে থাকেন, যার প্রায় ৯৪ শাতাংশই মৃত্যুই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে ঘটে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর