শিশু বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ পদোন্নতি জটের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি (বিপিএ)। একইসঙ্গে বিসিএসের ব্যাচভিত্তিতে পদোন্নতি ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক স্থাপনসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বরাবর স্মারকলিপিতে এসব দাবি জানান জেনারেল পেডিয়াট্রিকস ও পেডিয়াট্রিকস সাব-স্পেশালিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
এতে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ এবং সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন ঢালী স্বাক্ষর করেছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণসহ বিভিন্ন রকম অনিয়মের অবসান ঘটেছে। আপনার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) সুযোগ্য নেতৃত্বে জনগণের জন্য একটি কল্যাণধর্মী ও চিকিৎসক বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা আশা করি। আপনার এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা, সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরও সক্রিয় অংশীদার হতে চাই।
ইউনিসেফের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৮ বছরের কম প্রত্যেকেই শিশু, এর সংখ্যা শতকরা ৪৫ ভাগ। তারা শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ (পেডিয়াট্রিশিয়ান) এই শিশুদের স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য অংশীদার। তারা শিশুদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থ জীবনধারা প্রচারের কাজেও যুক্ত থাকেন। জরুরি চিকিৎসা সেবা ও জটিল রোগ নির্ণয়সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিহার্য, যা শিশুদের সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করে।
চিকিৎসা শিক্ষায়ও শিশু বিশেষজ্ঞদের অবদান উল্লেখ করে বলা হয়, এই চিকিৎসকরা ভবিষ্যত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রমে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে, শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদান করেন। মেন্টরশিপ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা (পেডিয়াট্রিশিয়ান) পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসকদের গঠন করতে এমবিবিএস, ডিসিএইচ, এমডি, এবং এফসিপিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দান করেন, যাতে তারা পরবর্তীতে সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম হন।
বিজ্ঞাপন
জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু হলেও সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ শিশু রোগীর জন্য বরাদ্দ। ফলে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের অন্তবিভাগে শয্যা সংখ্যার কয়েকগুণ বেশী শিশু রোগী ভর্তি থাকে, বহির্বিভাগেও থাকে উপচে পড়া ভিড়। জনবলের প্রকট ঘাটতি সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ রোগীদের যথাযথ সেবা দেবার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। উল্লেখ্য যে ঢাকা তথা বাংলাদেশে কোন সরকারি শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নেই।
বৈষম্যের স্বীকার দাবি করে তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী সফল আন্দোলনের পরে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান জরুরি বলে আমরা মনে করি। দিনদিন শিশুরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও সে তুলনায় পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে পদ সৃষ্টি করা হয়নি। অপর্যাপ্ত পদ সংখ্যা, অনিয়মিত এবং ত্রুটিপূর্ণ পদোন্নতি প্রক্রিয়ার ফলে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি পাচ্ছেন না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০ তম বিসিএস এর শিশু বিশেষজ্ঞ এখনো ষষ্ঠ গ্রেডের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত, যেখানে কোন কোন বিষয়ে একই বিসিএস এর কর্মকর্তাগণ অধ্যাপক পদে কাজ করছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ২০ তম বিসিএস এর কর্মকর্তাগণ অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। কোন কোন বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ১০ থেকে ১৫ বছর চাকরি করেও এখনো মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত আছেন। বর্ণিত বৈষম্যের ফলে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন, যা কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ ও চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে।
এসময় তাদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়। এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে তারা সরাসরি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করতে চান বলেও জানিয়েছেন।
দাবিগুলো হলো—
১. বিসিএসের ব্যাচ ভিত্তিক জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতি। যোগ্য সকলকে বিসিএসের সিনিয়রিটি অনুসারে অনতিবিলম্বে কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি প্রদান করা।
২. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পদোন্নতি প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণকে ওএসডি হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে সংযুক্ত করে বা ইনসিটু পদায়ন করা। চিকিৎসকগণ অনেক বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় ফিডার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ফলে তাদের মূল বেতন পরবর্তী পদোন্নতির ফলে প্রাপ্যদের মূল বেতনের নিম্নধাপ অতিক্রম করেছে অথবা তার কাছাকাছি আছে। তাই সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া হলে সরকারের আর্থিক ব্যয় তেমন বাড়বে না বলে প্রতীয়মান হয়।
৩. স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু বিভাগে মেডিকেল অফিসার থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত নতুন পদ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির পক্ষ থেকে পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দেওয়া হয়েছে।
৪. অন্যান্য ইনস্টিটিউটের মত ঢাকায় একটি সরকারি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিকস (এনআইপি) স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এমএইচ/এমএইচটি