স্বাস্থ্যসেবা খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের। তবে পেশাগতভাবে কয়েক যুগ ধরে তারা অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন এ পেশায় নিয়োজিতরা। ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেবার মানোন্নয়নে টেকনোলজিস্ট-ফার্মাসিস্টদের জন্য নতুন ৫০ হাজার পদ সৃষ্টিসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্রছাত্রীরা। এসময় আগামী সাতদিনের মধ্যে দাবি পূরণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সারাদেশে একযোগে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের সামনে ‘বৈষম্যাবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, কেন্দ্রীয় সংসদ’ আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিএসসি টেকনোলজিস্টদের কাজে লাগাতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রামে কোন পদ নেই। সরকার জনগণের চিকিৎসাসেবার মত মৌলিক অধিকার পূরণে দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি করলেও তাদের কাজে লাগাতে পারছেনা। ফলে বিএসসি মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা উচ্চতর ডিগ্রিধারী হয়েও বেকার ঘুরছেন। ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে দেশের মানুষের গুণগত ও মানসম্মত সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য সেবাও নিশ্চিত হচ্ছে না।
এ অবস্থায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের পেশাগত সম্মান, ন্যায্য অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়ে তারা বলেন, দাবিগুলো পূরণ করা হলে, মানুষ গুণগত ও মানসম্মত সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য সেবা পাবে। স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের পেশাগত মর্যাদা সুরক্ষিত হবে। তাই প্রধান উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। তবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বৈষম্যের শিকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র-ছাত্রীরা সারাদেশে একযোগে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
বিজ্ঞাপন
‘বৈষম্যাবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, কেন্দ্রীয় সংসদ’-এর আহ্বায়ক মো. আসাদুল সিকদারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. জীবান ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা অংশ নেন। একই সময়ে রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দাবিগুলো হলো—
১. মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দক্ষতা উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি পরিদফতর’ গঠন করতে হবে।
২. দেশের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিগুলোকে (আইএইচটি) মেডিকেল টেকনোলজি কলেজে রূপান্তর করে, ঢাকার আইএইচটিকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র মেডিকেল সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ বিষয়ভিত্তিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত বিভিন্ন পদে পদায়ন করতে হবে।
৩. মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদাসহ) বাস্তবায়ন করে ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করে দ্রুত নিয়োগ প্রদান করতে হবে।
৪. গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জন্য নবম গ্রেডের পদ সৃষ্টি করে স্ট্যান্ডার্ড সেট আপ ও নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. মেডিকেল টেকনোলজি কাউন্সিল গঠন করে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের জন্য প্রাইভেট সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৬. বিএসসি ও এমএসসি কোর্সে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ভাতা ও স্কলারশিপ প্রদানসহ সকল অনুষদের বিএসসি কোর্স চালু করে শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এমএইচ/এমএইচটি