রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

জ্বর-মাথাব্যথার প্রকোপ, সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

জ্বর-মাথাব্যথার প্রকোপ, সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই আবহাওয়ার চরমভাবাপন্ন রূপ দেখছে দেশবাসী। এল নিনো ও লা নিনার প্রভাবে একইসঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহ ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন বাংলাদেশ। আবহাওয়ার এই বিরূপ আচরণে মৌসুমী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দিকাশি ও ডায়রিয়াসহ পেটের নানাবিধ রোগ দেখা দিচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সোহেল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ব্যক্তি চারদিনের বেশি জ্বরে ভুগছেন। সাথে তীব্র মাথাব্যথা ও পেটের পীড়া। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভেবে উচ্চ ডোজের ওষুধ গ্রহণ করেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, চারদিন ধরে জ্বরে ভুগছি। তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠানামা করছে। সাথে তীব্র শরীর ও মাথাব্যথা। মাথার যন্ত্রণা এত বেশি যে, ফোনের নোটিফিকেশনের আওয়াজ পর্যন্ত সহ্য হতো না। এর সাথে পেটব্যথা। মনে হচ্ছিল বুকের নিচের অংশে চাকা বেঁধে আছে। স্বাভাবিক সময়ে যে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাই তার হাইডোজ খেয়েও অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ পরিবর্তন করেছি।

একই অবস্থা রাজধানীর মহাখালীর বাসিন্দা প্রান্ত সরকারের। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী ঢাকা মেইলকে বলেন, হঠাৎ করেই দুইদিন আগে জ্বর আসে। এর সাথে সর্দি-কাশি, তীব্র মাথা ও শরীর ব্যথা। জ্বর অনেক বেশি না থাকলেও মাথাব্যথায় একদম শয্যাশায়ী অবস্থা ছিল। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর সিজনাল জ্বর উল্লেখ করে প্যারাসিটামল গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

নয় মাস বয়সী শিশু আফরিনের অবস্থা আরও খারাপ। পেটের সমস্যায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবির) ও কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ হলেও ফের জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে।

শিশুটির মামা তুষার আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, সপ্তাহের শুরুতে আমার ভাগনির পেটের সমস্যা দেখা দেয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলেরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে তাকে ভর্তি না নিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর দুইদিন ভালোই ছিল। কিন্তু তিনদিন আগে জ্বর আসে৷ মাত্র পেটের সমস্যা থেকে সুস্থ হয়েছে, এর মধ্যে জ্বরে অনেকটা কাবু হয়ে যায়। পরে আমরা তাকে নিয়ে আদ-দ্বীন হাসপাতালে যাই। তবে ভর্তি না নিয়ে চিকিৎসক কিছু ওষুধ দিয়েছে। বলেছে অবস্থার উন্নতি না হলে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য।


বিজ্ঞাপন


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপদাহের কারণে মানুষের মাঝে অসুস্থতার প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া চলতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপও বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের ব্যাপারে অধিক যত্নশীল হতে হবে। প্রয়োজনে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে।

সতর্ক থাকার পরামর্শ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে রোগ-বালাই বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বাংলাদেশে এ বিষয়ে সার্ভিলেন্স করে থাকে। তারা বলছে, এবার ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। এর পাশাপাশি কিছু ডেঙ্গু ও করোনাও হচ্ছে। আর বর্ষাপূর্ব মওসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এর মাঝে কিছু কলেরাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে চলতি বছর রোগ-বালাই বেড়েছে।

সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত সকল উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গুর এনএস-১ পরীক্ষা করার সুযোগ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরামর্শ দেওয়া— কেউ জ্বর নিয়ে আসলে প্রয়োজনবোধে যেন ডেঙ্গু পরীক্ষাটি করায়। সর্বোপরি সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।

আইসিডিডিআর,বিতে রোগী পরিস্থিতি স্বাভাবিক

এদিকে বর্ষাপূর্ব সময়ে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বাড়লেও চলতি বছরে পরিস্থিতি অনেকেটাই স্বাভাবিক। তীব্র গরমের ফলে রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়েনি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে আইসিডিডিআর,বির জনসংযোগ শাখার সিনিয়র ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল খান ঢাকা মেইলকে বলেন, রোগীর সংখ্যা এ সময়ের স্বাভাবিকের মতোই রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগী বাড়ার বিষয়টি গরমের সাথে একদম সরাসরি সম্পর্কিত নয়। গরমের সময় যদি হিউমিডিটি বেশি থাকে তাহলে ডায়রিয়ার রোগী বাড়তে পারে। এটি বেশি থাকলে মানুষের অনেক বেশি ঘাম হয়। ঘাম বেশি হলে মানুষ অনেক বেশি পানি পান করবে। সে সময় অনিরাপদ পানি পান করায় পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া তার রোগের কারণ হতে পারে। যত বেশি ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি খাবে শরীরে তত জীবাণু লোড হবে। এটি বেড়ে গেলে তখন রোগ হবে।

তবে বিষয়টিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলেরা টিকার ইতিবাচক প্রভাব বলছেন অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, গত দুই বছর রাজধানীর কলেরা হটস্পটগুলোতে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমরা এর সুফল পাচ্ছি। কলেরার কারণে সংখ্যাটা বাড়তো। এবার তা হচ্ছে না। কিন্তু এর বাইরেও অন্যান্য জায়গায়ও কিছু আছে। এ সময়ে পানির দূষণ বেড়ে যায়। আবার গরম বাড়ার কারণে মানুষ অধিক পানি গ্রহণ করে। এই দুইটির যৌথ প্রভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। কখনও কখনও ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকেও ডায়রিয়া হয়।

এমএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর