সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ঢাকা

জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম সংকটের কারণ হতে পারে ই-সিগারেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম সংকটের কারণ হতে পারে ই-সিগারেট

ই-সিগারেট উৎপাদন ও প্রসারে সিগারেট কোম্পানিগুলোর উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম সংকটের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে ই-সিগারেটের প্রচার, প্রসার, আমদানি, রফতানি, পরিবেশন, বিপণন নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে। এরপরও কয়েকটি বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিভিন্ন উপায়ে দেশে অত্যন্ত ক্ষতিকর এই পণ্যের প্রচারে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। তাদের এ উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকির কারণ হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরই) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ২২টি সংগঠনের ‘ই-সিগারেট/ভেপিং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি : নিষিদ্ধ জরুরি’ শীর্ষক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

বক্তারা বলেন, বিদেশি সিগারেট কোম্পানি বিএটি সম্প্রতি বাংলাদেশে ভোক্তাদের আধুনিক জীবনধারার কথা উল্লেখ করে নতুন কিছু আর্ন্তজাতিক মানের পণ্য আমদানি করার অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তারা এ ধরণের পণ্যের চাহিদা নিরুপণে দেশের বাজারে এসকল পণ্য বিক্রয় করবে এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে এ পণ্যের উৎপাদন, পরিবেশন, বিপণন ও রফতানি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। তাদের এ ধরনের প্রচেষ্টা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গণমানুষের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি ক্যান্সার বিষেশজ্ঞ ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, কম ক্ষতিকর টার্ম ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ-যুবক এবং ধূমপায়ীদের ই-সিগারেটে আকৃষ্ট করছে। ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর নয়, বরং খুবই ক্ষতিকর একটি পণ্য। ই-সিগারেটের ব্যবহার ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য কোম্পানিগুলো ভ্যাপিং উৎসবের আয়োজন করছে, যা যুব সমাজকে নতুনভাবে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী এর স্বপক্ষে বিভিন্ন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়ায় ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছে। দেশের প্রায় ১৫০ জনের বেশি সংসদ সদস্য ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছে এবং সরকার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত ই-সিগারেটের প্রচার ও প্রসার খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। এমতাবস্থায় এখনই ই-সিগারেটের লাগাম টেনে না ধরলে পরবর্তীতে আইন করেও একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

‘যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডেঙ্গু এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে’

ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর এবং এটি ধূমপান ছাড়তে সহায়ক বলে তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচারণা করছে বলেও এসময় জানান তিনি।

ঢাকা আহসানিয়া মিশনের পরিচালক (হেলথ অ্যান্ড ওয়াস) ইকবাল মাসুদ বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (ব্যবহার) নিয়ন্ত্রণ আইন- ২০০৫ অনুসারে তামাক কোম্পানির সিএসআর এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার নিষিদ্ধ। কিন্তু সিগারেট কোম্পানি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করে শুধু আইনভঙ্গই করছে না, ই-সিগারেট প্রমোশনের চেষ্টা করছে।

প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ বলেন, দেশের মানুষকে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত করে সরকারের ওপর চিকিৎসার দায় বাড়িয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো মুনাফার পাহাড় গড়ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার দেশের বাইরে নানাভাবে পাচার করছে এ সিগারেট কোম্পানি। এ লাভে তারা তুষ্ট নয়, এদেশের মানুষকে আরও বেশি সিগারেটে আক্রান্ত করে, আরও মুনাফার পাহাড় গড়তে ই-সিগারেট/ভেপিং বাজার সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অরুপ রতন চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারের তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসডিজি অর্জনের অঙ্গীকার, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সংবিধানিক দায়বদ্ধতা, আদালতের নির্দেশনার পরও সিগারেট কোম্পানিগুলো এ দেশে আইন লঙ্ঘন করছে।  

সংবাদ সম্মেলনে ই-সিগারেট বন্ধে ৯টি সুপারিশ করা হয়-

১.বাংলাদেশে ই-সিগারেটের আমদানি, রফতানি, উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন, পরিবেশন, বিজ্ঞাপণ বা প্রচার-প্রচারণা বন্ধে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; 

২. নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; 

৩. অনলাইন বিজনেস সাইটসহ ই-সিগারেটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিজ্ঞাপণ নিষিদ্ধ করা; 

৪. বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমদানি নীতিতে ই-সিগারেট জাতীয় পণ্য আমদানি ও রফতানি নিষিদ্ধ করা;

৫. অর্থ বিভাগ ও রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ই-সিগারেট, এর ডিভাইস, ই-লিকুইড, রিফিলসহ এ জাতীয় সকল পণ্যের এইচআর কোড পণ্যের তালিকা প্রত্যাহার করা;

৬. সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-সিগারেট, ভ্যাপ বা অন্য কোনো নতুন নেশা জাতীয় বা তামাক জাতীয় অথবা নিকোটিন আছে এমন কোনো পণ্যের অনুমোদন না দেওয়া;

৭. ই-সিগারেট প্রসারে কার্যরত সিগারেট কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের গোপন তৎপরতা অনুসন্ধান করে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া;

৮. ই-সিগারেট বা ভেপিং জাতীয় পণ্যের ট্রেডমার্ক বা যে কোনো ধরনের নিবন্ধন বাতিল করা;

৯. অতিদ্রুত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া পাশ করে বাংলাদেশকে ই-সিগারেট মুক্ত করা। 

এমএইচ/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর