সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সেপ্টেম্বরেও রেকর্ড, কোথায় গিয়ে ঠেকবে ডেঙ্গুর প্রকোপ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

dengue
ফাইল ছবি

এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে গত জুন মাসে। এরপর প্রতি মাসেই তা আগের মাসের রেকর্ড ভঙ্গ করছে। সমাপ্ত হতে যাওয়া সেপ্টেম্বর মাসেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এক মাসে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু ও শনাক্ত আগে দেখেনি বাংলাদেশ।

সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ জনে। এর আগে আগস্টের ৩১ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিল ৩৪২ জন। এ হিসেবে গত মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ৫৪ জন বেশি মারা গেছেন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জনে। আর আগস্ট মাসে এই সংখ্যাটি ছিল ৭১ হাজার। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সিংহভাগই হয়েছে গত দুই মাসে।


বিজ্ঞাপন


সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ থাকতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে কমবে। গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নভেম্বর-ডিসেম্বরের পর একটু কম ছিল। চলতি বছর মার্চ থেকে বাড়তে শুরু করে। 

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮৯ জনে। গত একদিনে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪২৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৪০৬ জনে।

আরও পড়ুন: দেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু টিকার ‘সফল’ পরীক্ষা

Dengue3


বিজ্ঞাপন


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের জুলাই মাস ছিল ভয়ংকর। আগস্ট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেপ্টেম্বর সেই রেকর্ডও ভাঙে। মশানিধন কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনা করা না গেলে অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক পর্যায়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু চিকিৎসায় এত ব্যয় কেন?

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কর্মসূচিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আমাদের দেশে মশক নিধনে ফগিংকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ফগিংয়ের চেয়ে লার্ভিসাইডিংয়ের প্রতি বেশি জোর দেওয়া উচিত ছিল। এছাড়া যেভাবে ফগিং করা হচ্ছে আমাদের দেশে তাও ভুল পদ্ধতিতে। এখানে কুল (শীতল) ফগিং করা হয়, এটাও সঠিক পদ্ধতি নয়। এখানে হট (গরম) ফগিং করা হলে তা হবে বেশি কার্যকর। হট ফগিং করা হলে তাতে একটু তাপ থাকবে, এই তাপটা মশা নিধনে আরও বেশি কার্যকর। ইউরোপ-আমেরিকায় হট ফগিং করা হয়।

বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। 

শুধু ঢাকায় নয়, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর দেশব্যাপী গ্রামীণ এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ বেড়েছে তীব্রহারে। গত কয়েক মাস ধরে গ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জরিপে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণের জন্য দায়ী ডমিনেন্ট স্ট্রেইন হলো এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য দায়ী ভেক্টর এডিস মশা। এ প্রজাতির মশার দুটি প্রধান স্ট্রেইন- এডিস অ্যাজিপটি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস।

কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস এজিপটির তুলনায় এডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি জটিল। এই জটিলতার কারণে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এডিস অ্যালবোপিকটাস সাধারণত প্রাকৃতিক জলাধারে বেড়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু চিকিৎসা: ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতালেই নানা সংকট

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ থাকতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে কমবে। গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নভেম্বর-ডিসেম্বরের পর একটু কম ছিল। চলতি বছর মার্চ থেকে বাড়তে শুরু করে।

Dengue2

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন আর বর্ষা মৌসুমের আতঙ্ক নয়। ফলে এর ভয়াবহতা বাড়ছে। এটি মোকাবিলায় দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের জুলাই মাস ছিল ভয়ংকর। আগস্ট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেপ্টেম্বর সেই রেকর্ডও ভাঙে। মশানিধন কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনা করা না গেলে অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক পর্যায়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা। 

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর