শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

ডেঙ্গু চিকিৎসায় এত ব্যয় কেন?

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ডেঙ্গু চিকিৎসায় এত ব্যয় কেন?

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে পাঁচ দিন ভর্তি ছিলেন ভ্যানচালক বাদশাহ মিয়ার কিশোরী মেয়ে। সরকারি হাসপাতাল হলেও চিকিৎসা খরচ বাবদ এই পাঁচ দিনে তার পকেট থেকেই পাঁচ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে বলছিলেন তিনি।

‘প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করানোর খরচ তো আছেই। তার ওপর অনেক সময়ই হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে ওষুধের সাপ্লাই নাই- তখন বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। আর রোগীর খাওয়া-দাওয়ার খরচ তো আছেই,’ বলছিলেন বাদশাহ মিয়া।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, মেয়েকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়নি বা প্লেটলেট দিতে হয়নি বলে তার খরচ অনেকের তুলনায় কম হয়েছে। আইসিইউ সুবিধা লাগলে বা প্লেটলেট নেওয়া লাগলে রোগের মাত্রা ভেদে চিকিৎসা খরচ চার-পাঁচ গুণ বেড়ে যায় বলে বলছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় ৪০০ কোটি, রোগীপ্রতি খরচ ৫০ হাজার টাকা

বাদশাহ মিয়ার মেয়ের মতো পাঁচ দিন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রফিকুল ইসলামের ভাই মুহিতুল ইসলামও। তার ডেঙ্গুর ধরনও অনেকটা একই ছিল।

রফিকুল ইসলামের ভাষ্যে, ‘কেবিন ভাড়া, পরীক্ষা আর ওষুধের খরচ, খাওয়া-দাওয়া– সব মিলিয়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে।’


বিজ্ঞাপন


আরেকটি বেসরকরি হাসপাতালে দুই দিন ভর্তি থাকা বদরুদ্দোজা বাবুর ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচ হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যুর হার বেশি, কী বলছেন চিকিৎসকরা

DD

‘মূল খরচ হয়েছে প্লেটলেট নেওয়ার প্রক্রিয়ায়, সেখানে লেগেছে ৩০ হাজার টাকা। কেবিনের ভাড়া লেগেছে দুই দিনে ১৩ হাজার টাকা। আর অন্যান্য খরচ ছিল পরীক্ষা করা ও ওষুধ কেনার।’

ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকারের বিশাল অংকের অর্থ খরচ হচ্ছে বলে বলা হলেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ সাধারণ মানুষের খরচ হওয়া অর্থের পরিমাণও কম নয়।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু কোথায় গিয়ে থামবে, তা স্পষ্ট নয়: স্বাস্থ্য অধিদফতর

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক মন্তব্য করেছেন যে, প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীর পেছনে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে সরকারের। তিনি জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা বাবদ এরই মধ্যে সরকারের খরচ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।

তারপরও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে একজন রোগীর পকেট থেকে ন্যূনতম পাঁচ হাজার থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ কেন হচ্ছে?

‘বিনামূল্যে বললেও পদে পদে টাকা লাগে’

ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলছিলেন যে, সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা ‘বিনামূল্যে করার কথা থাকলেও আসলে প্রতি পদে পদেই টাকা লাগে।’

ওই চিকিৎসক বলছিলেন, সরকারি হাসপাতালে দশ টাকা টিকেট আর বিশ টাকা ফর্মের খরচ বাদে রোগীর চিকিৎসার জন্য আর কোনো খরচ করার কথা না থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তেমনটা হতে দেখা যায় না।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছে সরকার

‘রোগীদের ওষুধ বিনামূল্যেই দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেক সময়ই রোগীরা অভিযোগ করেন যে ‘ওষুধ নাই’ বা ‘কাল/পরশু আসবে’ বলে তাদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে বলা হয়। চিকিৎসার জন্য রোগীদের তখন বাইরে থেকে ওষুধ কিনতেই হয়।’

এছাড়া ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করতে বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে কম টাকা লাগলেও সেটিও বহন করতে হয় রোগীকেই।

DD2

‘এছাড়া আইসিইউতে সিট বুকিং দিলে ৩-৪ দিন আগে তা পাওয়া যায় না। সেখানেও টাকা লেনদেন হয় এমন অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে যদিও চিকিৎসার এসব খরচ সরকারেরই বহন করার কথা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই চাপ রোগীর ওপরই গিয়ে পড়ে।’

সরকার কি চিকিৎসা খরচ কমাতে পারত?

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের ২০২০ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮.৫% ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যয়ের মাধ্যমে বা মানুষের নিজেদের ‘পকেট থেকে’ খরচ হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তে এগিয়ে মধ্যবয়সীরা

দেশে ডেঙ্গু যেহেতু অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করেছে, তাই চিকিৎসার খরচ কমাতে সরকারের কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম করা উচিত ছিল বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ নাসরিন সুলতানা।

‘এবারের ডেঙ্গু ধরন পরিবর্তন করেছে, তাই এর পরীক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতাও বেড়েছে। ডেঙ্গু নির্ণয় করতে বেশ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। যেহেতু পরিস্থিতি অনেকটা মহামারি পর্যায়ে চলে গেছে, সরকার সাময়িকভাবে ডেঙ্গুর পরীক্ষা সবার জন্য ফ্রি করে দিতে পারে।’

পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে এবং এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে যথেষ্ট সচেতনতাও অবলম্বন করা হয়নি বলে মনে করেন মিজ. সুলতানা।

‘কোভিডের সময় সরকার যেমন মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালিয়েছে – গ্রামে, গঞ্জে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, মাইকিং করা হয়েছে, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে – ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তার কিছুই আমরা দেখিনি।’

তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে রোগপরবর্তী চিকিৎসায় জোর না দিয়ে ডেঙ্গু যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়াই ডেঙ্গু ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। -বিবিসি বাংলা

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর