শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

এনআইসিইউ সংকট, বাঁচানো গেল না ৫ নবজাতকের কাউকে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

মাদারীপুরের কালকিনি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়েছিল সন্তানসম্ভবা ফাতেমা আক্তারকে। পথেই জন্ম নেয় তার প্রথম সন্তান। এরপর একে একে জন্ম নেয় আরও চার সন্তান। তবে দিনভর কয়েক হাসপাতাল ঘুরেও বাঁচানো যায়নি পাঁচ নবজাতকের কাউকে। কারণ তারা ছিল অপরিপক্ক। তাদের জন্য দরকার ছিল নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা এনআইসিইউর। কিন্তু সেটা মেলানো যায়নি। যখন পেয়েছেন তখন তাদের কেউ আর বেঁচে নেই।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার শিশু হাসপাতাল ঘুরে এমন ঘটনার কথা জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


স্বজনরা জানিয়েছেন, ফাতেমা ঢাকায় থাকেন। প্রায় সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তিনি নিয়মিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে চেকআপ করাতেন। সম্প্রতি চিকিৎসক তাকে মানা করেন গ্রামের বাড়িতে যেন না যান। কারণ তার পেটে চার সন্তান রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। কখন কী হয় সেই আশঙ্কা থেকেই চিকিৎসক এমন পরামর্শ দেন। এরপরও তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন।

গতকাল রাত থেকে ফাতেমার পেটে ব্যথা ওঠে। আজ ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে সকালে জন্ম নেওয়া প্রথম নবজাতকটিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুপুর ১২টার পর তিনি একে একে আরও চারটি সন্তানের জন্ম দেন। তবে কারও অবস্থা ভালো ছিল না। পাঁচ নবজাতকই ছিল অপরিপক্ক। আশানুরূপ ছিল না ওজন। ফলে জন্মের পর থেকে তাদের সমস্যা দেখা দেয়। জরুরি ভিত্তিতে তাদের হাসপাতালের এনআইসিইউতে রাখার দরকার ছিল।

কল্যাণপুরের সেই বেসরকারি হাসপাতালে কোনো এনআইসিইউ ছিল না। তড়িঘড়ি করে তারা শিশু হাসপাতালে আসেন। ইতোমধ্যে আরও দুই সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর সেখানেও কোনো এনআইসিইউ না পেয়ে পাশে থাকা রেনেসাঁ হাসপাতালে যান তারা। এই হাসপাতালে এনআইসিইউ থাকলেও তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।


বিজ্ঞাপন


ঢাকায় ফাতেমার তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। মাদারীপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে এসেছিলেন তার ছোট ভাই। কিন্তু তিনি ঢাকার অনেক কিছুই বোঝেন না। ফাতেমার স্বামী একজন প্রবাসী। মঙ্গলবার বিকেলে শিশু হাসপাতালে তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছিলেন ফাতেমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ফরহাদ হোসেন শাওন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

দুপুর সোয়া দুইটার দিকে শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তারা পায়চারী করছিলেন। সাথে তুলায় মোড়ানো দুই নারীর হাতে কিছু একটা দেখতে পেয়ে বোঝা গেল সদ্য নবজাতক। তাদের খলিল নামে এক আনসার সদস্য বলছিলেন- বাংলামোটরের পদ্মা হাসপাতালে সিট আছে। তবে সেটা কিসের সিট তা বোঝা যাচ্ছিল না।

পরে দুই নারীর সঙ্গে আসা যুবক ফরহাদ হোসেন শাওনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকা মেইলকে জানালেন, তারা দুপুর দেড়টা থেকে শিশু হাসপাতালে এনআইসিইউর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না। এই মুহূর্তে দুই নবজাতককে এনআইসিইউতে রাখতে না পারলে তাদের কোনোভাবে বাঁচানো যাবে না। ইতোমধ্যে তার কাছে এসে এক লোক জানিয়েছেন রেনেসাঁ হাসপাতালে দুটি এনআইসিইউ মিলেছে। দ্রুত তারা হাসপাতালের বাইরে রাখা অ্যাম্বুলেন্সে ওঠে গেলেন। চলে গেলেন সেই হাসপাতালের দিকে।

সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে শাওনের সাথে ফোনে কথা হয়। তিনি জানালেন, সেই দুই নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তারা দুজনের জন্য এনআইসিইউ পেয়েছিলেন, কিন্তু সন্ধ্যার আগে তাদের মৃত্যু হয়।

শাওন বলেন, আমরা আজ এই পাঁচ নবজাতককে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। এই কষ্ট রাখব কোথায়! কাকে বলব!

ফাতেমার স্বজনরা আরও জানান, তারা কল্যাণপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আসার সময় যানজটে পড়েছিলেন। ফলে চার শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর তারা শিশু হাসপাতালে তাদের নিলে অনেক চেষ্টা করেছেন এনআইসিইউতে নেওয়ার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটার দিকে জানায়, তাদের পক্ষে এনআইসিইউ দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ফোন দেওয়া শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত এনআইসিইউ পেলেও নবজাতকদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তারা আরও জানান, বিকেলে শিশু হাসপাতাল থেকে যখন বেসরকারি হাসপাতালে দুই নবজাতককে নেওয়া হয় তখন তারা কোনোভাবে অ্যাম্বুলেন্সে পাচ্ছিলেন না। এরপর ফাতেমার সঙ্গে থাকা সেই যুবক শাওন জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন দিয়ে দুটি অ্যাম্বুলেন্স পেলেও যানজটে দেরি হয়। ফলে তারা এক রোগীকে নামিয়ে দিতে আসা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছোটেন সর্বশেষ হাসপাতালে। তবে দেরি হয়ে যাওয়ায় নবজাতকদের আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।  

এ বিষয়ে কথা বলতে শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলমের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এমআইকে/জেবি


ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর