শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যুর হার বেশি, কী বলছেন চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যুর হার বেশি, কী বলছেন চিকিৎসকরা
ফাইল ছবি

দেশে চলতি বছর এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ডেঙ্গুর জন্য ভয়াবহ বছর হিসেবে ধরা হয় ২০১৯ সালকে। সেই বছরের রেকর্ড ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা লাখের কোটা ছাড়িয়েছে। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যাও পাঁচশ ছুঁই ছুঁই। আগস্টের ২১ দিনেই ৫০ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সবশেষ সোমবার (২১ আগস্ট) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ দুই হাজার ১৯১ জনে। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ৪৮৫ জনের।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ভয়ংকর জুলাই, আগস্ট নিয়ে আরও শঙ্কা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত নারীর তুলনায় পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। তবে মৃত্যুর হার বেশি নারীর। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৪৮ জন। আর আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৪৪৩ জন। তবে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪৮৫ জনের মধ্যে নারী ২৭৭ জন। আর পুরুষ ২০৮ জন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, ডেঙ্গুতে পুরুষদের আক্রান্তের হার ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ, নারীদের আক্রান্তের হার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ৪৬ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ মারা গেছে ৩৩ জন।

আরও পড়ুন: ঢামেকে ডেঙ্গু কেড়ে নিলো নারী চিকিৎসকের প্রাণ


বিজ্ঞাপন


ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি মারা যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ডা. শাহাদাত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, জেনেটিক কারণে নারীদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। আর এ কারণে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার হার বেশি। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোনো নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু কোথায় গিয়ে থামবে, তা স্পষ্ট নয়: স্বাস্থ্য অধিদফতর

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের যত্ন নেন। কিন্তু নিজে অসুস্থ হলে গুরুত্ব কম দেন। অসুস্থ হলে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তারা। এসব কারণে হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। দেরি করে এলে ঝুঁকিতে থাকেন তারা।

ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীরা কেন বেশি মারা যাচ্ছেন সেটি নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা করা হয়নি। তবে এটি নিয়ে গাইনি ও অবস চিকিৎসকেরা গবেষণা করতে চাচ্ছে।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো অস্বাভাবিক। সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা হলে ডেঙ্গু সন্দেহ করা হয়, তিনি জানান, কিন্তু এ বছর ডায়রিয়া, পেটব্যথা, খিঁচুনিসহ আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কোনো নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বুঝতে সময় লাগছে। আবার অনেক সময় তারা হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। এ কারণে তাদের মৃত্যুর হার বেশি বলে তিনি বলেন।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তে এগিয়ে মধ্যবয়সীরা

ডা. নিয়াতুজ্জামান আরও বলেন, শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলেই ডেঙ্গু কি না সেটি পরীক্ষা করা উচিত। আর অসুস্থ হলে দেরি না করে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছে সরকার

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর