শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

দর্শকের ভাবনার জায়গা প্রশস্ত করাই আমার উদ্দেশ্য

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ
প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

দর্শকের ভাবনার জায়গা প্রশস্ত করাই আমার উদ্দেশ্য
গল্প বলার ক্ষেত্রে বরাবরই স্বকীয়তা বজায় রাখেন অনম বিশ্বাস। তিনি চান, দর্শক বিনোদিত হওয়ার পাশাপাশি ভাবনার সুযোগ পান। সদ্য প্রকাশ পেয়েছে তার নির্মিত ‘দুই দিনের দুনিয়া’ ওয়েব ফিল্ম। সামাজিক মাধ্যমে সাড়া ফেলেছে এটি। ছোট ছোট রিভিউতে ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন দর্শক। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। জানিয়েছেন, নিজের অনুভূতি ও ভাবনার কথা।

ওয়েব সিনেমা ‘দুই দিনের দুনিয়া’ তো সাড়া ফেলল। অনলাইনে ইতিবাচক রিভিউ দিচ্ছেন দর্শক। তবুও জানতে চাই, এতেই কি আপনি সন্তুষ্ট?

অনেক তাড়াহুড়া করে আমরা সিনেমার শুটিং শেষ করেছি। সময় পেলে আরও ভালো করতে পারতাম। তবুও কাজটি দর্শকের ভালো লেগেছে কারণ, তারা গল্পটি রিলেট করতে পারছেন।

এখন সময়টা এমন, যে কেউ রিভিউ লিখছেন। নিজের মতামত জানাচ্ছেন। সেটারও একটা প্রভাব পড়ে দর্শকের ওপর। সেই জায়গা থেকে শুটিংয়ের সময় কি ‘রিভিউ’ বিষয়টি মাথায় রাখেন?

রিভিউকে আমি এপ্রিশিয়েট করি। তবে সেটা যেন গঠনমূলক হয়, সেদিকটায় খেয়াল রাখা উচিত। দর্শক কী রিভিউ দেবেন তা ভেবে কনটেন্ট বানানো সম্ভব না। আমি কেন, এটা কেউ পারবেন না। নির্মাতা নিজের ভালো লাগা থেকে কনটেন্ট বানান। তবে সব নির্মাতা চান যেন তার নির্মাণ দর্শকের কাছে ভালো লাগে। আমিও তাই চাই। ‘দুই দিনের দুনিয়া’ দেড়-দুই বছর আগের গল্প। ‘চরকি’ এটা বানানোর সুযোগ দিয়েছে। আমি যতটা সুযোগ পেয়েছি ভালোভাবে বানিয়েছি। দর্শকের ভালো লেগেছে, এটা কাজের স্বার্থকতা।

Duidiner


বিজ্ঞাপন


গুণী অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফাও ‘দুই দিনের দুনিয়া’র প্রশংসা করেছেন। এগুলো নিশ্চয়ই বাড়তি অনুপ্রেরণা?

সুবর্ণা মুস্তাফা তো একজন লিজেন্ড। তার মতো বড় মাপের মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া আমার জন্য বড় পাওয়া। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি ছাড়া অনেক জনপ্রিয় তারকারাও জানিয়েছেন তাদের ভালো লাগার কথা। সত্যি এসব মূল্যায়ন আমাকে আরও ভালো কাজের সাহস জোগাবে।

দর্শক কেন ওয়েব ফিল্মটি পছন্দ করেছেন বলে মনে করেন?

চঞ্চল চৌধুরী-ফজলুর রহমান বাবু ভাই আর গল্প— এই তিনের সমন্বয় দর্শকের কাছে ভালো লেগেছে। দর্শক প্রাথমিকভাবে গল্প দেখতে দেখতে আবিষ্কার করেন এটার মধ্যে আরও গল্প আছে। তখন তারা সেকেন্ড টাইম দেখেন। এই সিনেমার গল্প একবার দেখলে বোঝা যাবে না।

তাহলে এটাকে জটিল গল্প বলবেন?

একদমই না। আমি একজন সাধারণ দর্শককেও গল্প বোঝাতে চাই। কিন্তু সেটা বুদ্ধিদীপ্ত গল্প হতে হবে। লালনের গান একজন রিকশাওয়ালা বোঝেন। ধরুন, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়…’ গানটি তো তিনি শোনেন। শোনার সময় কি তিনি জানেন কোন খাঁচার কথা বলা হয়েছে? আট কুঠুরি, নয় দরজার মানে খুঁজতে যান? ভালো লাগে তাই শোনেন। আমার নির্মাণ এমন যে, আপনি যদি মাথা খাটাতে না চান তাহলে গল্প বুঝতে পারবেন। আবার যদিও মাথা খাটাতে চান তাহলে সেটারও জায়গা থাকবে। আমাদের দেশের ফিল্মে সাধারণত মাথা খাটানোর জায়গা থাকে না। আলাদা করে বোঝার কিছু নেই। আমি চাই না, আমার কাজ থেকে দর্শক কেবলমাত্র বিনোদিত হোক। দর্শকের ভাবনার জায়গা প্রশস্ত করাই আমার উদ্দেশ্য। তবে গল্পের প্রথমেই তাকে ভাবতে বসিয়ে দেব না, দেখতে দেখতে যেন ভাবনার জায়গা তৈরি হয় সেদিকটায় লক্ষ্য রাখি।

babu

ওয়েব ফিল্মে ব্যবহৃত ‘টেকা পাখি’ গানটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। টিকটকে তো শর্ট ভিডিও বানানোর হিড়িক পড়ে গেছে। কোন ভাবনা থেকে গানটি লিখেছেন?

আমি টুকটাক গান লিখি। অনেক গান হয়তো লিখিনি। তবে যেগুলো লিখেছি সেগুলো মানুষ পছন্দ করেছেন। ‘টেকা পাখি’ গানটি আমাদের সমাজের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। মানুষ টাকার পেছনে ছুটছে দিন-রাত। লেখার সময় ভাবছিলাম, গানের কথা সাধারণ হওয়ায় শ্রোতারা এর সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারবেন। সেটাই হয়েছে। মাশাও দারুণ গেয়েছেন।

আপনার কাজগুলো প্রশংসিত হয়। তবুও ওই অর্থে আপনি সেভাবে সামনে আসেন না, আড়ালেই থাকেন। কেন?

সত্য বলতে আমি অনেক অন্তর্মুখী। নিজেকে কীভাবে হাইলাইট করতে হয় সেটা জানি না। এমন একজন মানুষ যে, ছোটবেলায় বন্ধুর গায়ে হলুদে গেলে কী করব সেটাই বুঝতে পারতাম না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তাম। কাজের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে রিলেট থাকা আমার জন্য সহজ। যদিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। আড়ালে থাকলে চলে না। এ কারণে এখন বুঝতে পারছি, আমার সামনে আসা উচিত। জানি না পারব কি না! তবে চেষ্টা করে দেখব। দেখা যাক।

Anam

‘দেবী’র পর আপনাকে বড় পর্দায় দেখা গেল না। যদিও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছেন। সবমিলিয়ে ফের কবে বড় পর্দায় ছবি নিয়ে আসছেন?

আমি আসলে নিয়মিত সিনেমা বানাতে চাই। কয়েকটি গল্প নিয়ে কাজ করছি। শুধু ফিল্ম বানিয়ে যদি জীবিকা নির্বাহ করা যেত তাহলে সেটিই করতাম। আমাদের এখানে তো সেই সুযোগ নেই। হয়ত সামনে সুযোগ আসবে। তবে ‘ফুটবল-৭১’ সিনেমার কাজ আগামী বছর শুরু করব।  

/আরএসও

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর