শেরপুরে চলছে ‘শাপলা শালুক’ ছবির দৃশ্যধারণ। নির্মিতব্য এ ছবির পরিচালক রাশেদা আক্তার লাজুক। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন আব্দুন নূর সজল ও শবনম বুবলী। দিন দুয়েক আগে ছবির শুটিংয়ে বন্য হাতির দল আক্রমণ করে। এতে বিঘ্ন ঘটে শুটিংয়ে। খবরটি উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। যা নজরে পড়ে অভিনেত্রী জয়া আহসানের।
বনের ভেতর শুটিং হচ্ছে ভেবে অ্যানিমেল লাভার বলে পরিচিত জয়া আহসান বেশ ক্ষুব্ধ হন শুটিং টিমের ওপর। ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি আজ বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘এই আরেক উপদ্রব বনের ভেতর। বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মন চাইলেই লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন শুরু করা যায়?’
বিজ্ঞাপন
এরপর লেখেন, ‘মাইকের শব্দ, শুটিং টিমের বর্জ্য, গান-বাজনা এগুলো কি অ্যালাউ করা ঠিক হবে এরকম একটা সেন্সিটিভ জায়গায়?’
জয়ার ওই পোস্টে নেটিজেনদের অনেকে সহমত পোষণ করেন। কেউ মন্তব্যের ঘরে ‘শাপলা শালুক’ ছবির শুটিং টিমের বিরুদ্ধে কড়া আইনি নোটিশ পাঠানো হোক— দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন
জয়ার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হয় ‘শাপলা শালুক’ পরিচালক লাজুকের সঙ্গে। জয়ার এহেন পোস্ট সবাইকে অবাক করেছে বলে জানান তিনি। ঢাকা মেইলকে লাজুক বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। অবাক হয়েছি। কেননা শুটিংয়ে হাতির আক্রমণ হয়েছে শুনে তিনি (জয়া আহসান) ফোন করে আমাদের একটা খবর নিতে পারতেন। এখানে বুবলী আছেন, আব্দুন নূর সজল আছেন। সজলের সঙ্গে তার অনেক কাজ হয়েছে। ওই জায়গা থেকেও খোঁজ নিতে পারতেন আমরা ঠিক আছি কি না। তা না করে উল্টো আমাদের শুটিং বন্ধের আহ্বান জানালেন! ওনার কাছে এরকম আচরণ আশা করিনি।’
লাজুক জানান, তারা বনে শুটিং করছেন না। পার্শ্ববর্তী গ্রামে পেতেছেন ‘শাপলা শালুক’ -এর সেট। ভুল তথ্যে দিশাহারা না হয়ে খোঁজ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘উনি (জয়া আহসান) লিখেছেন আমরা বনের ভেতর শুটিং করেছি। এটা একেবারেই ভুল। আমরা গ্রামে শুটিং করছি। সিনেমাটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাইছি। সেজন্যই সুন্দর একটি গ্রাম বেছে নিয়েছি। আমরা বনে হাতির কাছে যাইনি। বরং হাতি আমাদের এখানে এসেছে। কেননা বনে খাদ্য সংকট দেখা দিলে হাতি গ্রামে আক্রমণ করে। সেরকমই হয়েছে। আর উনি না জেনে লিখে দিলেন, বনের ভেতর শুটিং করেছি। ওনার এই কথায় আমি, শবনম বুবলী, সজলসহ সবাই অবাক হয়েছি। এটা নিয়েই বলাবলি করছিলাম। আর একটা কথা, জয়া আহসান একাই শুধু অ্যানিমেল লাভার নন, পশুপাখির প্রতি আমাদেরও ভালোবাসা আছে।’
পরিচালক মনে করছেন জয়া দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনকে অসম্মান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুটিংয়ে কোনো বর্জ্য ফেলি না। শুধু আমরা না, আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনের কেউ শুটিংয়ে বর্জ্য ফেলেন না। তার মানে কি উনি শুটিংয়ে বর্জ্য ফেলেন? বর্জ্য ফেলার কথা বলে উনি শুধু আমাদের অপমান করেননি, দেশের সংস্কৃতি চলচ্চিত্রাঙ্গনের সবাইকে অসম্মান ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।’
লাজুক মনে করছেন জয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তার কথায়, ‘তিনি ওই পোস্টে তিনি বন বিভাগের কাছে ছবির শুটিং বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। আমি মনে করি তার এই পোস্ট অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেননা শুরু থেকেই ছবিটি আটকে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। দুই বছর প্রজেক্টটি আটকে ছিল। সব চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আমি ছবিটা করছি।’

তিনি যোগ করেন, ‘একটি সিনেমার ক্ষেত্রে অনুদানের টাকা সাপোর্ট মাত্র। সেটি দিয়ে ছবি সম্পন্ন হয় না। আর আমার ছবি তো অ্যাকশনধর্মী। সেখানে বড় বাজেট লাগছে। দেশের সেরা অভিনয়শিল্পীদের নিয়েছি। ছবিটি সময়পোযোগী করে উপস্থাপন করতে এবং সব বয়সী ও শ্রেণির দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। সেজন্য যেখানে যা লাগে করছি। এ নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেননা আমি নারী হয়ে এরকম মহাকর্মযজ্ঞ একা হাতে সামলাচ্ছি। তাছাড়া আমার ছবিতে বুবলী-সজলের মতো জনপ্রিয় তারকা কেন? এ নিয়েও অনেক কানাঘুষো চলেছে। আমার মনে হচ্ছে জয়া আহসানও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই পোস্ট করেছেন।’
ছবিটির নির্বাহী প্রযোজক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম অলি। তিনিও অবাক ও বিব্রত জয়া আহসানের ফেসবুক পোস্ট দেখে। বলেন, ‘প্রথমত আমরা বনের ভেতর শুটিং করছি না। আজকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো লোকেশনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। চাইলে যে কেউ আমাদের শুটিং সেটের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। পাশাপাশি শুটিংয়ে বর্জ্য ফেলার প্রশ্নই ওঠে না। এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সচেতন। যেখানে শুটিং করছি সেখানে ১০টা বিন ব্যবহার করছি। একটি খালি বোতলও যত্রতত্র ফেলি না। অতএব আমি বলব জয়া আহসানের মতো গুণী শিল্পী এ ধরনের প্রশ্ন তুলে শুধু আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করেননি। এটি সরকারি অনুদানের ছবি। ছবির শুটিং সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবাই অবগত। অতএব উনি শুধু আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করেননি। সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনকে অসম্মান করেছেন।’
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে চলছে ‘শাপলা শালুক’ ছবির দৃশ্যধারণ। পরিচালক জানিয়েছেন ছবির নাম পরে বদলে যেতে পারে। এ ছবিতে সজল-বুবলী ছাড়াও অভিনয় করছেন সুমন আনোয়ার, আয়মান শিমলা, দিলরুবা দোয়েল, রফিকুল রুবেল, বাপ্পী প্রমুখ।
আরআর

