ফেলে আসা শৈশবের কিছু গল্প থাকে রমজানের ঘ্রাণমাখা। ঘুম ভেঙে সেহেরি খাওয়া দিয়ে শুরু হতো দিন। ক্লান্ত শরীর টেনে ইফতারের টেবিলে বসার মধ্য দিয়ে হতো শেষ। এরমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটত যা মনে রাখার মতো। বছর ঘুরে পবিত্র এই মাসটি ফিরে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে সেসব।
ঢাকা মেইলের কাছে শৈশবের রোজা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আইশা খান। কেমন ছিল শৈশবের রমজান— জানতে চাইলে বলেন, ‘শৈশবে রমজান খুবই ভালো ছিল। স্কুল চলত। রোজার মধ্যে স্কুল ফাঁকি দিতে ইচ্ছা করত না। দরকার হলে অ্যাপ্লিকেশন করে কামাই দিতাম । সে কারণে ক্লাস অনুপস্থিতি খুব কম থাকত। উপস্থিতির জন্য প্রতি বছর পুরস্কার পেতাম। তবে রোজার মধ্যে স্কুল কিংবা কাজ করা কঠিন হয়ে যেত। মজাও হতো। সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্কুল চলত। ঈদের মতো আনন্দ কাজ করত। মনে হতো দুই ঘণ্টায় ক্লাস শেষ। এছাড়া স্কুলে একদিন সবাই মিলে ইফতার করতাম। ছোটবেলার রোজাটা অনেকটা এরকম ছিল।’
বিজ্ঞাপন
আরও বলেন, ‘আমরা ২৫ বছর ধরে এক বাসায় আছি। রোজার মধ্যে এক ফ্ল্যাট থেকে অন্য ফ্ল্যাটে ইফতার দিত। ৭ টা ফ্লাট থেকে আমাদের বাসায় ইফতার আসত। ঈদের অপেক্ষা, রোজার শেষের দিকে মেহেদি দেওয়া, ঈদের পোশাক কেনা, সেগুলো কাউকে দেখানো যাবে না— সব মিলিয়ে রোজার মাস মানে ছিল উৎসব।’
একরত্তিদের রোজা রাখায় বরাবরই আপত্তি থাকে বাবা-মায়ের। বিভিন্নভাবে শিশুদের রোজা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। এমনটা ঘটেছে আইশার সঙ্গেও। সেসব ভাগ করে বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত রোজা রাখতে পারতাম না। রোজার তাৎপর্যও এত বুঝতাম না। আম্মু বলতেন, প্রথম ও শেষটা রাখলে সব রোজা হয়ে যাবে। ২৭ রোজা অর্থাৎ লাইলাতুল কদরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে বোঝানো হতো।’
বিজ্ঞাপন
তবে তাৎপর্য উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গে রমজানকে আবশ্যক করে নেন তিনি। এরকম উল্লেখ করে বলেন, ‘বড় হয়ে বুঝলাম রমজানের আলাদা উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য রয়েছে। তখন একটু একটু করে বাড়ানো শুরু করলাম। এক বছর ১৫ টা, পরের বছর ২০ টা এভাবে আস্তে আস্তে টানা ৩০ টা রোজা রাখা শুরু করলাম।’
যোগ করেন, ‘নাচের প্র্যাকটিসে কষ্ট হলে স্যার বলতেন পানি খেতে। তখন বলতাম, না না কেন পানি খাব? এটা তো পরীক্ষা। পিপাসা লাগলেও খেতে পারব না। এরকম ছোটবেলায় হয়েছে। এখন তো বড় হয়েছি। একটু চুপচাপ থাকি। সেজন্য অনেকে মনে করেন আমি মুডি। তাই কেউ কিছু বলেন না। তবে শুটিং সেটে অনেক মজা হয়। সবাই এসে জিজ্ঞাসা করে, আপা নাস্তা দেই? পরে আবার সরি বলে। স্টাফরা কয়েক ঘণ্টা পর পর এসে পানি, নাস্তা দিতে চায়। বেশ মজা-ই হয়।’
এবার বড়বেলার রোজা নিয়ে আইশার ভাষ্য, ‘এখন রোজার তাৎপর্যটা বুঝি। যত কষ্ট হোক এ মাসে ফার্স্ট প্রায়োরিটি থাকে রোজা রাখা। এ মাসে কাজ করতে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করি। সেটা নাচের প্রোগ্রাম, উপস্থাপনা কিংবা ফিকশন— যেটাই হোক। এরমধ্যে বেশ কিছু ডিরেক্টরের সাথে যুদ্ধ করেছি। বলেছি, রমজান মাসে কেন আপনাদের সব প্ল্যানিং করতে হবে। এক মাস আগে কেন করেন না। তারপরও এ বছর যত সম্ভব কম কাজ করা হয়েছে। আগামী বছর চেষ্টা করব আরও কম করতে। যতটুকু কাজ না করলেই না ততটুকু করার চেষ্টা করব।’
আইশার স্মৃতিতে এখনও কড়া নাড়ে ইফতারের সুখস্মৃতি। সেসব ভাগ করে নিলেন, ‘কাজিনদের সঙ্গে ইফতার মিস করি। তারা এখন দেশের বাইরে থাকে। তাই একসঙ্গে ইফতার হয়ে ওঠে না। তবে সহকর্মীদের সঙ্গে করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে যাদের সাথে কাজ করছি তারা একসঙ্গে করি। ওই জায়গা থেকে বলা যায় কাজিনদের সঙ্গে ইফতারের বিষয়টি কলিগদের সাথে ফিক্সড হয়ে গেছে। কিন্তু ঈদ এলে কাজিনদের মিস করি। তবে সালামি ঠিকই পেয়ে যাই। দেশের বাইরে থেকে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আগে একসঙ্গে উদযাপন করতাম। প্রত্যেকে তার বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতাম, আড্ডা দিতাম। সেসব এখন আর হয় না।’