শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

হাবিপ্রবিতে পাঁচ শিক্ষককে মেরে হাসপাতালে পাঠাল কর্মচারী

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

হাবিপ্রবিতে পাঁচ শিক্ষককে মেরে হাসপাতালে পাঠাল কর্মচারী
কর্মচারীর মারধরে আহত শিক্ষকরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছবি: ঢাকা মেইল

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এক কর্মচারীর মারধরে আহত হয়েছেন একই বিভাগের পাঁচ শিক্ষক। তারা সবাই দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে একাডেমিক ভবন–২ এর তৃতীয় তলায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


আহত শিক্ষকরা হলেন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক রোকনুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক বেলাল হোসেন, প্রভাষক হারুন অর রশিদ ও নির্মল চন্দ্র রায়। এছাড়া প্রভাষক পদে সদ্য নিয়োগ পেয়ে আজই যোগ দিতে আসা মাহাবুব হোসেনও মারধরের শিকার হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকরা অফিসে এসে দেখেন অভিযুক্ত কর্মচারী মো. তাজুল ইসলাম ডিপার্টমেন্টে আসেনি। সকাল ৯টার পরে তাজুল ডিপার্টমেন্টে এলে দেরি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এর আগেও তিনি ছোটখাটো বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতেন। এ কারণে বিভাগের চেয়ারম্যানসহ অন্য শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগপত্র লিখতে বসেন। এতেই তাজুল ক্ষিপ্ত হয়ে হাতের কাছে থাকা কাঁচের মগ দিয়ে শিক্ষকদের এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও ৪ বছর ধরে হলে!

ফ্যাকাল্টির অন্য শিক্ষকরা বলেন, তাজুলের হামলায় আহত শিক্ষকরা প্রাণভয়ে ফ্যাকাল্টি ভবনের বাইরে বের হয়ে এলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে আমরা বের হয়ে আসি। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাই।


বিজ্ঞাপন


aaa
মারধরকারী কর্মচারীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ছবি: ঢাকা মেইল

ঘটনার পর অভিযুক্ত তাজুলকে আটক করে প্রক্টরের গাড়িতে উপাচার্য ভবনের সামনে বসিয়ে রাখা হয়। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা গাড়ি ঘিরে রেখে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, আহত শিক্ষকদের মাথায়, বুকে, পিঠে জখমের চিহ্ন রয়েছে। একজনের ঠোঁটে সেলাই পড়েছে এবং দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যেকের হাতে স্যালাইন টানানো আছে।

এর আগেও তাজুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খামার শাখার ডেপুটি চিফ সুপারিন্টেন্ডেন্ট গোলাম সারোয়ারের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ আছে। এবিষয়ে গোলাম সারোয়ার ঢাকা মেইলকে বলেন, ৭-৮ বছর আগে আমি তখন ফার্মের দায়িত্বে ছিলাম। তখন সে দুধ নিতো। একদিন দুধ নিতে এলে আগের বকেয়া পরিশোধ করে দুধ নিতে বললে সে আমার উপর চড়াও হয়। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। তৎকালীন ভিসি রুহুল আমিন স্যারের সময়ে বিষয়টি রিজেন্ট রোর্ডেও তোলা হয়েছিল। পরে আমার বাড়িতে তার ফ্যামিলির লোকজন এসে অনুরোধ করলে আমি মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে মাফ করে দেই। তার মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল, মাথা গরম থাকতো। এর আগেও ওই বিভাগের এক শিক্ষক আমার এখানে তার পরিবর্তে অন্য কর্মচারী আছে কি না জানতে চান। বর্তমানে তার সাথে দেখা হলে ভালো আচরণ করে। পরিবর্তন দেখেছিলাম।

ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও অত্যন্ত মর্মাহত। প্রশাসনের আশ্বাসে তিন দিন দেখবো। এর মাঝে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আমরা কর্মবিরতিসহ অন্য কর্মসূচিতে যাবো। তবে শিক্ষার্থীদের যাতে একাডেমিক দিকটা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখছি।

HHH
এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: ঢাকা মেইল

আরও পড়ুন: আন্দোলনের ‘ফাঁদে’ বশেমুরবিপ্রবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মামুনুর রশীদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘটনার পরপরই তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা অভিযুক্তকে পুলিশে দিয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুপুর দেড়টার দিকে তাজুলকে প্রক্টরের গাড়িতে করে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মামুনুর রশীদ থানায় এসে মামলা করেন।

দিনাজপুর সদর থানার ওসি মো: ইফতেখার হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, অভিযুক্ত তাজুলকে আমরা পুলিশি হেফাজতে নিয়েছি। তার বিরুদ্ধে ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬ ও ৩০৩ ধারায় গুরুতর আঘাত ও জখমের মাধ্যমে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কান্ট্রি ট্যুরের যাত্রা বাতিল হওয়ায় তাদের টিকিটের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়ার আশ্বাস দেন প্রক্টর। বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা প্রশাসনের আশ্বাসে আর আন্দোলনে যাচ্ছি না। দ্রুততম সময়ে তার উপযুক্ত শাস্তি না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো।

অভিযুক্ত তাজুলের সাথে সকালে হামলার বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন এবং চুপ থাকেন।

প্রতিনিধি/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর