শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঢাবি ক্যাম্পাসে সব দলের সহাবস্থান চান বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাবি ক্যাম্পাসে সব দলের সহাবস্থান চান বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনসহ সব দল-মতের সহাবস্থানসহ নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালনের নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

রোববার (২ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের নেতারা এই দাবি জানান।


বিজ্ঞাপন


ক্যাম্পাসে সব ধরনের ‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাদা দল দাবি জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলায় আহত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া, হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবগঠিত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ ১৫ নেতাকর্মী আহত হন।

ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সাদা দল আজকের সংবাদ সম্মেলন ডাকে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান।


বিজ্ঞাপন


লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ছাত্রলীগের নির্মম, ন্যক্কারজনক ও বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাদা দল তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আগমন প্রতিহত করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ছাত্রলীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ বাতিল করেননি উপাচার্য। তাই তাঁরা প্রত্যাশা করেছিলেন, ছাত্রদলের সঙ্গে উপাচার্যের সাক্ষাৎ নিরাপদ-নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু তাঁরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে দেখলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এই ব্যর্থতার কারণে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

লুৎফর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি আহত ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যাননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে যে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক এই হামলার পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি প্রচ্ছন্ন সায় বা মদদ ছিল? যদি তা না হবে, তবে কেন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আসা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নিরাপদে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রক্টরিয়াল বডি নিষ্ক্রিয় ছিল?’

আরও পড়ুন: ঢাবি সিন্ডিকেট নির্বাচনে খাতাই খুলতে পারেননি বিএনপিপন্থীরা

সাদা দলের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তারা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাসকে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্যের লালনভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আজ প্রতিনিয়ত তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ‘গেস্টরুম’ নামক এক অপসংস্কৃতির মাধ্যমে আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। তাঁরা বারবার ‘গেস্টরুম’ নামক ‘মিনি টর্চার সেল’ বন্ধের দাবি জানালেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়-হল প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার সুযোগে ছাত্রলীগ হল ও ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্যে পরিণত করে ফেলেছে। হলগুলোতে তাঁরা ছায়া প্রশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়েও কথা বলেন লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ইডেন কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগ বাংলাদেশের নারী শিক্ষার এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের জীবনকে কীভাবে দুঃসহ করে তুলেছে, প্রতিষ্ঠানটির মানমর্যাদাকে কীভাবে ভূলুণ্ঠিত করেছে, সেখানকার ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে তা জাতির সামনে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা শিক্ষক হিসেবে এ ঘটনায় লজ্জিত ও মর্মাহত। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ইডেন কলেজ নয়, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্রও কম-বেশি একই রকম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এ অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাদা দলের নেতা এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মামুন আহমেদ, মো. মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, আল-আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর