শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘সাধ-আহ্লাদ কিছুই পূরণ হয় না, তবু শিক্ষকতা তো ছাড়া যায় না’

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

madrasa
২০ দিন ধরে আন্দোলন করছেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। ছবি: সংগৃহীত

‘প্রায় ১৮ বছর ধরে ইবতেদায়ি মাদরাসায় শিক্ষকতা করি। চাকরি শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারি অনুদানের আশ্বাসই শুধু শুনে এসেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো আমাদের প্রতিষ্ঠানও সরকারি হবে- এমন কথাও শুনেছি বহুবার। কিন্তু এখন এসে বুঝতে পারছি, আসলে সবই ছিল শুধুই আশ্বাস। কোনোটাই পূরণ হয়নি। আসলে শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, একবার শুরু করলে আর বের হওয়া যায় না। এজন্য এখানে আটকে গেছি। অথচ জীবনের সাধ-আহ্লাদ কোনো কিছুই পূরণ করতে পারি না এই পেশায় থেকে। এমনকি ঈদের সময় লুঙ্গি-গামছা পর্যন্ত কেনার সামর্থ্য থাকে না। তবু চাকরিটা ছাড়তে পারিনি।’

এক নাগারে কথাগুলো বলছিলেন শিক্ষক আজিজুর রহমান (ছদ্মনাম)। তিনি বরিশালের একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অন্য অনেকের সঙ্গে তিনিও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

এক অধ্যাপকে চলছে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়!

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা জানান, ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। সেই সময়ে কোডভুক্ত মাদরাসাগুলোও জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার সেটি আর করেনি। যার ফলে দীর্ঘ দিন ধরে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এই শিক্ষকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রায় সাত হাজার কোডভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। যার মধ্যে ১৫০০ মাদরাসা অধিদফতর থেকে খুব অল্প অনুদান পায়।

Teacher2
শিক্ষকদের আন্দোলনে হামলা চালায় পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

আজিজুর রহমান বলেন, আমরা মূলত বছরের দুই সময়ে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের থেকে অনুদান গ্রহণ করি। সব একসঙ্গে করে যে অর্থ আদায় হয় সেটা সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই অর্থের পরিমাণ খুবই নগণ্য। মাস হিসেবে ধরলে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো হয়। বর্তমান সময়ে এই টাকা দিয়ে আসলে সংসার চালানো যে কত কষ্টের সেটি বলে বোঝানো যাবে না।

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ১৯৮৪ সালে পূর্ব ছোট কৈবর্তখালি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই মাদরাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২০ জনের বেশি। এই মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন হাসান মাহমুদ। তিনি ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষকতা করেন।

আরও পড়ুন

দায়িত্ব অনেক ‘সম্মান কম’, বেতন কাঠামো নিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ

হাসান মাদমুদ বলেন, ‘আমি ২১ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করি। কিন্তু সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। অনুদানের মাধ্যমে যেটুকু পাই সেটা সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়।’

এই শিক্ষক বলেন, ‘বাবার জমি থাকায় ফসল উৎপাদন করতে পারি, তাই সংসার চলে। এটি না হলে সংসার যে কীভাবে চলত আল্লাহ জানেন একমাত্র। এভাবে আসলে শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য থাকলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু এগিয়ে যেতে পারে? সরকার সবার জন্য একটা ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।’

Teacher3
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা। ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। মাদরাসা অধিদফতর থেকে এই মাদরাসার শিক্ষকরা অনুদান পান। সেই হিসেবে প্রধান শিক্ষক মাসে ৩৫০০ ও সহকারী শিক্ষকরা ৩৩০০ টাকা পান।

এই মাদরাসায় ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করা একজন বলেন, ‘মাদরাসা অধিদফতর থেকে আমরা একটা অনুদান পাই। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে আসলে কিছু করায় সম্ভব নয়৷ কারণ তিন হাজারের একটু বেশি টাকা মাসে পাওয়া যায়। এই টাকা দিয়ে আসলে বর্তমানে কী করা সম্ভব? তাই জাতীয়করণের আন্দোলনে আসা। আর কতদিন আমরা বৈষম্যের শিকার হবো।’

আরও পড়ুন

শিক্ষকদের এত আন্দোলন কেন?

গত ২০ দিন ধরে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। এর মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর তাদের ভুখা মিছিলে পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডে প্রায় ১০০ জন শিক্ষক আহত হন। তারপরও তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। জাতীয়করণের ঘোষণা ছাড়া তারা এখান থেকে যাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।

এএসএল/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর