শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এক অধ্যাপকে চলছে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়!

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

education
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপকও নেই। ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছয়টি অনুষদে ৯ হাজার ৭১ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২২৫ জন। যার মধ্যে অধ্যাপক মাত্র একজন। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ৬০, সহকারী অধ্যাপক ১৩৫ ও প্রভাষক ২৯ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৪০। যা অন্তর্জাতিক মানদণ্ডের দ্বিগুণ। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের ৪৮টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আশেপাশেও নেই। যার মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপকও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের তথ্যে সাজানো ৫০তম প্রতিবেদনটি গত মার্চে প্রকাশিত হলেও এর প্রিন্ট সংস্করণ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।


বিজ্ঞাপন


শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা জানান, দেশের উচ্চ শিক্ষার মান খুব নয়। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের বিষয়ে নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও বিবেচনায় নিতে হবে। যদিও উচ্চ শিক্ষায় যত বেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত কম হবে, তত ভালো। বিভিন্ন কারণে শিক্ষক নিয়োগ আটকে থাকে বলেও জানানো হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পাবলিক ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের আন্তর্জাতিক মান নেই ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যদিকে ১১০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নেই।

যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই


বিজ্ঞাপন


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১:২১, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ১:৩৭, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৩, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১:২২, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৫, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৩, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৪, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১:৩০, বেগম রোকেয়া বিশ্ববদ্যিালয় ১:৩৫, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৮, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১:২১ এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৯। এর কোনোটিতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই।

আরও পড়ুন

স্থায়ী সনদ নেই ৯৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের, কী ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের নামে ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্য!

যেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ১:৩৬, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১:২১, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি ১:২৪, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১:২২, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ১:২৯, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি ১:২৪, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১:২৫, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১:২৭, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১:২৭, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ১:২৪, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি ১:২৫, সিটি ইউনিভার্সিটি ১:২৮, প্রাইম ইউনিভার্সিটি ১:২৮, নর্দান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১:২৭, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ১:২২, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ ১:২৪, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ১:২৮, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১:২৮, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া ১:২১, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ১:৩০, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ১:২৮, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি ১:২৩, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১:২৮, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ১:৩০, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি ১:২৩, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি১:২৩, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস ১:২৮, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১:২৬, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স ১:৩৫, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১:৩৫ এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা ১:৩৭। এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই।

RR
উচ্চশিক্ষায় বড় বাধা শিক্ষক সংকট। ছবি: সংগৃহীত

যা বলছেন শিক্ষাবিদ, উপাচার্য ও শিক্ষার্থীরা

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশে যে হারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে সে অনুপাতে ভালো শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে উচ্চ শিক্ষার মান দেশের প্রতিনিয়ত অবনতি হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের বিভাগে শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। এটির বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে। যার মধ্যে অন্যতম হলো সিলেবাস শেষ হতে দেরি, পরীক্ষার ফলাফল সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। এছাড়া ষষ্ঠ সেমিস্টারে এসেও আগের শিক্ষকরাই কোর্স পড়ান।

আরও পড়ুন

সংকট পিছু ছাড়ছে না ৭ কলেজের!

শিক্ষকদের এত আন্দোলন কেন?

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত যত কম হয় সেটিই ভালো। কিন্তু আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের সার্বিক অবস্থায় আসলে কেমন অনুপাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকা দরকার সেটি নিয়েও গবেষণা হতে পারে। তারপর সেটির বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাজ করতে হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। শিক্ষকের অনুপাত, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব আসলেই মানসম্মত হওয়া উচিত।’ 

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার আসলে কয়েকটা ফ্যাক্টর রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো কারিকুলাম ও শিক্ষক। যার মধ্যে বাংলাদেশের কারিকুলাম খুব বড়। আমরাও আসলে বিশ্বমানের কারিকুলাম মানে বুঝি অনেক বেশি কিছু থাকতে হবে। কিন্তু বিষয়টা তেমন নয়, বরং অল্প কিছু রাখা যাতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চর্চার সুযোগ পায়। এছাড়া বর্তমানে মুক্ত চর্চার সুযোগ একেবারে কমে গেছে। এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘শিক্ষকই হলো আসল কারিকুলাম। তাই শিক্ষার্থীদের অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক অবশ্যই থাকতে হবে। এটি ছাড়া উচ্চ শিক্ষা খুব ফলপ্রসূ হবে না। শিক্ষকদের মুক্তভাবে আলোচনার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

এএসএল/জেবি

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর