বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফাইন্যান্স (বিআইআইএফ) এর উদ্যোগে 'টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি হিউম্যান ক্যাপিট্যাল ফর ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে বিআইআইএফ এর কনফারেন্স হলে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
উক্ত সেমিনারে কিনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউএসএইড, ডিএফআইডি-ডিএএনআইডিএ, এডিএনওসি, ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর কনসাল্টটেন্ট আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. মুহম্মদ শামসুদ্দিন। বিআইআইএফ’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বিআইআইটি’র মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে বিআইআইএফ'র একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ড. কে এম জাকির হোসেন সেলিম ও বিআইআইটি'র ডেপুটি ডিরেক্টর ড. সৈয়দ শহীদ আহমেদ এর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন রিলায়েন্স গ্রুপের সাবেক এমডি মুহাম্মাদ আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট এর কাজী মুহাম্মাদ মুর্তজা আলী এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. সাইফুল্লাহসহ আরও অনেকে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, সকলকে নিয়ে চিন্তা করলে সেন্স অব রেসপন্সিবিলিটি বৃদ্ধি পায়। তারাই জাতীয় সম্পদ হবে, বিশ্বের সম্পদ হবে, উম্মাহর সম্পদ হবে; যারা মানব পুঁজিকে ব্যবহার করে মানব উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সক্ষম। যারা ব্যবস্থাপনায় অপারদর্শী তারা সেবার মান বাড়াতে পারে না, সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না, ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। আসলে মেরুদণ্ডহীনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেখে এবং ইসলামিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনোই সম্ভব হবে না।
ডা. শামসউদ্দীন বলেন, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বর্তমানের আধুনিক বিশ্বে আলোচিত একটি বিষয়। এটি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাপ্লাই করা যায়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়। এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমাদের দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে বিশ্বমানের জনসম্পদে পরিণত করতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে পঞ্চাশেরও অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ১৫০ এরও বেশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের
শিক্ষার্থীরা যোগ্য হয়ে উঠছে না। বিশ্ববাজারে চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যোগ্যতা, দক্ষতা না থাকার ফলে তা হারিয়ে ফেলছে। আমাদের উচিত এদেরকে সঠিক ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এর আওতায় আনা। সঠিক প্লাটফর্ম গঠনের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ার বেজড স্কিল অর্জনে উৎসাহিত করতে হবে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যত বিশ্ববাজারের উপযোগী এমন যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে যারা দেশীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ দেশে বেশি শিক্ষিতরা বেশি স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক বলেই অধিকাংশ মানুষ সমস্যা ভোগ করে। নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে নিজের চেষ্টায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সততা ও দক্ষতার সমন্বয় প্রয়োজন, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং পেশাদারিত্ব খুব বেশি দরকার। কে কত বছর চাকরি করছে প্রমোশনে তা বিবেচনা করা ঠিক নয়, পারফরমেন্স ও কন্ট্রিবিউশনকে বিবেচনা করতে হবে। চাকরিকেন্দ্রিক যেকোনো কাজ পেলেই করা ঠিক না; নিজের পছন্দ-আগ্রহ, দক্ষতা, ক্যারিয়ার ও সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে কর্মক্ষেত্র ঠিক করতে হবে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানোর সংকটটা হচ্ছে দক্ষদেরও মূল্যায়ন হয় না। এজন্য প্রয়োজনে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ দরকার।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. সাইফুল্লাহ, রিলায়েন্স গ্রুপের সাবেক এমডি মুহাম্মাদ আবদুল জাব্বার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট এর সিইও কাজী মুহাম্মাদ মুর্তজা আলী, এনসিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শফিউল্লাহ, সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল্লাহ শরীফ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে পিএলসির ফরেন রেমিটেন্স ডিভিশনের মো. আনিসুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আমির হোসেন, ড. গোলজারে নবী ও মো. সাইদুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বিআইআইটি'র ডেপুটি ডিরেক্টর ড. সৈয়দ শহীদ আহমেদ, লেখক ও গবেষক আনিসুর রহমান এরশাদ, বিআইআইএফ'র সহকারী পরিচালক মো. লোকমান হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
আরএ/এফএ