ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে কলা অনুষদে। চিন্তা-চেতনা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে নেতৃত্ব দেয় অনুষদটি। তবে কলা অনুষদের মানবণ্টনে চাকরির অনুপযুক্ততার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এজন্য এই অনুষদের কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রাহমান খানের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন এসব তথ্য।
বিজ্ঞাপন
ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ওবিই অর্থাৎ আউট কাম বেইসড এডুকেশনের মডেল ধরে এগোচ্ছি। এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষা আমরা দিচ্ছি তার একটা আউটকাম যাতে শিক্ষার্থীরা পায় সেটি নিশ্চিত করা হবে। অলরেডি কয়েকটি ডিপার্টমেন্টে আমরা এই নতুন কারিকুলাম শুরু করেছি। ধীরে ধীরে পুরো কলা অনুষদের সব বিভাগে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
জানা গেছে, নতুন এই কারিকুলামে মানবণ্টন ও মূল্যায়নে আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন। সর্বমোট ১০০ শতাংশ নম্বরের কোর্স চূড়ান্ত পরীক্ষা বা ফাইনাল এক্সামে থাকবে ৫০% নম্বর। একটির স্থলে দুটি মিডটার্ম পরীক্ষায় ১০% করে মোট ২০%। উপস্থিতি ক্লাস পারফরমেন্সের জন্য থাকতে পারে ১০%। নতুন করে যুক্ত হতে পারে কুইজ ও প্রেজেন্টশন বা অ্যাসাইনমেন্ট। এতেও ১০% করে মোট ২০% নম্বর বরাদ্দ থাকবে।
এছাড়াও কলা অনুষদের জন্য জিইডি কোর্স বা জেনারেল এডুকেশন নীতিমালা প্রণয়নসংক্রান্ত উপকমিটির ছয়টি প্রস্তাব আছে। এসব প্রস্তাব পরিমার্জন করে শিগগির বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
যে ছয়টি প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো-
বিজ্ঞাপন
১. কলা অনুষদের কারিকুলামে আন্ডাজ্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য বর্তমানে প্রচলিত ১২০ ক্রেডিটের পরিবর্তে ১৪০ ক্রেডিট প্রয়োজনীয় করা।
২. ১৪০-এর মধ্যে কমপক্ষে ২৮ ক্রেডিট জিইডি কোর্স রাখতে হবে। এই ২৮ ক্রেডিটের জন্য ও ক্রেডিটের সাতটি কোর্স বেছে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়ার জন্য থাকবে মানবিকের নয়টি, সামাজিক ও ব্যবসায় শিক্ষার ১১টি ও বিজ্ঞানের ছয়টিসহ ২৬টি জেনেরেল এডুকেশন কোর্স।
৩. একটি করে কোর্স নিয়ে এই সাতটি জিইডি কোর্স প্রবর্তন করা যেতে পারে। তবে শর্ত হলো-
ক. বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি কোর্স সকল বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে।

খ. মানবিক বিভাগের কোর্সসমূহের মধ্যে নিজ নিজ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোর্স ওই বিভাগের জিইডি হিসেবে বিবেচিত হবে না।
৪. গবেষণা-পদ্ধতি বিষয়ক একটি কোর্স সকল বিভাগের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কোর্সটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজাইন করতে হবে, কোর্সটি সপ্তম সেমিস্টারে অফার করতে হবে এবং সেটি জিইডি হিসেবে বিবেচিত হবে না।
৫. জিইডি কোর্সসমূহ কোন সেমিস্টারে অফার করা হবে, সেটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিজেদের সুবিধা অনুসারে নির্ধারণ করতে পারবে। তবে জিইডি কোর্সসমূহ প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষের মধ্যে সমাপ্ত করা উত্তম।
৬. কারিকুলাম ফরম্যাট অনুসারে ১৪০ ক্রেডিট বণ্টিত হবে প্রথম থেকে অষ্টম সেমিস্টারের প্রতি সেমিস্টারে ১৭ ক্রেডিট × ৮= ১৩৬ ক্রেডিট করে। এরমধ্যে চারটি ও ক্রেডিটের কোর্স এবং বর্তমানের ন্যায় টিউটোরিয়াল যা সংযোগ ক্লাস ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১ ক্রেডিট বরাদ্দ থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝেও রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। শিক্ষার্থীরা এটিকে তাদের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জিদান সরকার বলেন, এটি ভালো দিক। আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কিছু জ্ঞান সব জায়গায় লাগে। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে পাওয়া মানে আমরা চাকরির বাজারের জন্য আরও সক্ষম গ্রাজুয়েট হতে পারা৷
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাছুম রানা বলেন, প্রস্তাবিত এই কারিকুলামে চাকরির বা নিজের ডিসিপ্লিনের বাইরেরও জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা থাকছে ফলে কেবল চাকরিই নয়, কেউ আরও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে তারও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলে মনে করি।
আরএ/জেবি

