ঢাকা কলেজের আবাসিক হলে পূর্ব নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী সিট না পাওয়ায় হলের প্রভোস্টকে আটকে রেখে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জেমিনসহ কয়েকজন ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।
হেনস্তার শিকার শিক্ষকের নাম অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ। তিনি ঢাকা কলেজ সাউথ হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা দুইটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল তরুণ বারবার শিক্ষকের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। হাত ধরে টানাটানি করছেন। একপর্যায়ে ওই শিক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে দেখা যায়। উত্তেজিত কণ্ঠে এ শিক্ষককে মারতে যাচ্ছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে ছাত্রদলের পদধারী কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। এদের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. সাজ্জাদ হোসেন জেমিন। বর্তমানে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক মেসকাত হোসেন তনয়, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক সজীব বিশ্বাস, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বাবু প্রমুখ।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে শহীদ আ ন ম নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেমিনের নেতৃত্বে সাউথ হলের প্রভোস্ট আনোয়ার মাহমুদকে অফিস রুম থেকে অডিটোরিয়ামে ডেকে আনা হয়। তার পছন্দ অনুযায়ী সিট না দেওয়ায় সেখানে আনোয়ার স্যারের সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে মারমুখী আচরণ করেন। তবে তাকে বারবার শান্ত করার চেষ্টা করেন উপস্থিত ছাত্রদলেরই কিছু নেতাকর্মী।
বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুল প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী আনোয়ার স্যারকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অডিটোরিয়ামে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমাদেরকে বের হতে বললেও আমরা বের হইনি। ধমক দিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলেছে। এতে স্যারও ভয় পেয়েছে। একপর্যায়ে স্যার বের হয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। সে সময় তারা স্যারের হাত ধরে টানাটানি করে। এ সময় জেমিন স্যারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ৬ মাস পর কিন্তু নির্বাচন দিবে তখন হিসাবগুলো বুঝে নিয়েন।
এদিকে ছাত্রদল পরিচয়ে সিট চাওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করলেও হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাজ্জাদ হোসেন জেমিন। তিনি বলেন, আমি ক্যান্ডিডেট প্রার্থী, আমার অনুসারী বেশি তাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আর আমি ছোট ভাইদের জন্য সিট চেয়েছি। ছাত্রদল কর্মীদের জন্য সিট চেয়েছিলাম, কিন্তু শিক্ষকরা খুবই সামান্য সিট দিয়েছে। হলে সিট বরাদ্দের আগে কথিত সমন্বয়ক কিংবা শিক্ষকদের পক্ষে থেকে আমাদের (ছাত্রদল) সঙ্গে কথা বলা হয়নি। ছাত্রদল কর্মীরা কি ছাত্র নয়, এমন প্রশ্নও করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাউথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ বলেন, আমরা ছাত্রদের আসনগুলো বিভাগীয়ভাবে ভাগ করে দিয়েছি। আমি সেখানে ছাত্রাবাস ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করেছি। এক্ষেত্রে কিছু কিছু ছাত্র হয়তো ভাবছে, সিট আমি দিয়েছি। তবে এটা কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে হয়েছে।
ভিডিওতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আমাকে একটি লিস্ট দিয়ে বলেছে, এই লিস্টে যারা আছে তাদেরকে সিট দিতে হবে। তখন আমি সিট দেওয়ার কেউ না বলে জানিয়েছি। যদি সিট থেকেই থাকে তবে সেটা ডিপার্টমেন্টে সুপারিশ করে সেই প্রক্রিয়ায় হবে। কেউ কখনও বলতে পারবে না আমি সিট দিয়েছি। তখন আমি বলি, এখানে আর থাকব না। সে সময় হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করে বলে, আপনারা স্যারের সঙ্গে এমন আচরণ কেন করছেন? তারপর আমি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব, যতদিন আমি এখানে থাকব বলে চলে এসেছি।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহিনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এমন ঘটনার কথা শুনিনি। আমাদের দলীয় নির্দেশনা আছে, কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যক্তির দায় কখনও সংগঠন নেবে না।
সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মৃধা বলেন, ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো লিস্ট শিক্ষকদের কাছে দেওয়া হয়নি। কলেজ প্রশাসন তাদের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে সিট দিয়েছেন। অডিটোরিয়ামে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা আমরা শুনিনি। কেউ যদি করেও থাকে ব্যক্তির দায় কখনও ছাত্রদল নেবে না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ বিশৃঙ্খলা করে থাকলে সাংগঠনিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এমএইচ/এমএইচএম

