মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এই পরীক্ষা নিয়ে কেউ গুজব ছড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আগামীকাল শুক্রবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আগামীকাল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের ১৯টি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৪৪টি ভেন্যুতে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যার মোট আসন পাঁচ হাজার ৩৮০টি। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে অনুমোদিত ৬৭টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যার মোট আসন ছয় হাজার ২৯৫টি।
স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়ন, প্রকৃত শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র বহনকারী ট্রাঙ্কে একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রয়েছে যার মাধ্যমে অধিদফতর থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা নেওয়া কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে বিগত কয়েক বছর অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ডিজিটালাইজেশনের ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়েছে। এতে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম চলমান আছে।
এছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজের ধারাবাহিকতায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম রোধ এবং শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় বলে জানান সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অনলাইন প্রক্রিয়ায় শুরু হওয়ায় প্রকৃত শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পথ বন্ধ হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিতের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টি জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পরীক্ষা কেন্দ্রের তথ্য ও নিয়ম জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৯ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা কেন্দ্র বা ভেন্যুর গেট খুলবে সকাল ৮টায়। পরীক্ষার দিন সকাল সাড়ে ৯টার পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্রের রঙিন প্রিন্ট কপি নিয়ে আসতে হবে। কেন্দ্র বা ভেন্যু-তে পরীক্ষার্থীদের (ছেলে ও মেয়ে) আলাদা তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ও বল পয়েন্ট কলম ছাড়া অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষ্যে মেটাল ডিটেক্টরের পাশাপাশি আর্চওয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের বিষয়টি তদারক করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র বা ভেন্যুতে সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে ইনভিজিলেটররা (কক্ষ পরিদর্শক) এবং পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্ষে অবস্থান করে প্রবেশপত্রে পরীক্ষার্থীর ছবির জলছাপ ও রঙিন ছবির সাথে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
পরীক্ষার্থী, ইনভিজিলেটর ও ভেন্যুর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কর্মকর্তারা কোনোভাবেই মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্লুটুথ, এয়ারফোন, ইত্যাদি বহন করতে পারবে না। ভর্তি পরীক্ষার হলে ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িত কেউ মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র বা ভেন্যুতে ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবে না।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি থেকে মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অফলাইন কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও অনলাইন কোচিং বন্ধ ও সাইবার অপরাধ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া পরীক্ষার দিন পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশের ফটোকপি মেশিন বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রকার অসদাচরণ, প্রতারণা ও গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত কাউকে চিহ্নিত করা গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এমএইচ/জেবি