দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সর্বস্তরের মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থা বেশি খারাপ। জরিপের তথ্য বলছে, দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে ৯০ শতাংশ পরিবার অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। আর মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আর সঞ্চয় বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার।
জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর গত ছয় মাসে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ, কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৯ মার্চ) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: আয়ের ৬০ শতাংশ খরচ হচ্ছে খাদ্যে!
জরিপের চিত্র তুলে ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে।
গত মার্চ মাসে করা জরিপে দেশের আট বিভাগের এক হাজার ৬০০ পরিবার অংশ নেয়। তবে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি—এই ছয় মাসের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জরিপ করার উদ্দেশ্যের কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সানেমের কর্তা ব্যক্তিরা।
সানেমের দাবি, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে না কমেছে, তা তুলে ধরার জন্য এই জরিপ করা হয়নি। জরিপ করা হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের সামনে নিয়ে আসার জন্য।
কী উঠে এসেছে সানেমের জরিপে?
জরিপের তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বাড়তে থাকায় গত ছয় মাসে যে ৭৪ শতাংশ পরিবার ধার করে চলেছে, তাদের ধার করা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ হবে, এমন পরিস্থিতি এখনো আসেনি।
আরও পড়ুন: চাহিদা বেড়েছে মুরগির চামড়া, গিলা-কলিজা, পায়ের
বরং পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে যে আগামী ছয় মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে। বিগত ছয় মাসে ধারের উৎস হিসেবে ৪৫ শতাংশ পরিবার বেছে নিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ পরিবার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সমবায় সমিতি থেকে ধার করছে ২৩ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ব্যাংক ও মহাজনি ঋণ নিয়েছে যথাক্রমে ১৪ ও ৩ শতাংশ পরিবার।
জরিপ বলছে, ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আর সঞ্চয় বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার।
মূল্যস্ফীতির চাপে খরচ কাটছাঁট করার তথ্য উঠেছে জরিপে। জরিপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবারে মাসে চার বার মুরগি খেত, এখন তারা দুই বার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।
আরও পড়ুন: কম দামে পণ্য পেতে টিসিবির কার্ড খুঁজছে মানুষ
ঘরে খাবার আছে কি না তা নিয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারের উদ্বেগের কথা জরিপে উঠি এসেছে জানিয়ে সামেন বলছে, খাবারে বৈচিত্র্য কমেছে। খাদ্যতালিকায় থাকছে মাত্র কয়েকটি পদ। ৩৭ শতাংশ পরিবার বলেছে, তাদের এখন মাঝেমধ্যে কোনো এক বেলা খাবার না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় খাবার কম খাচ্ছে বলে মনে করে ৭১ শতাংশ পরিবার।
জরিপকারীদের কাছে ১৮ শতাংশ পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন যে, এই চয় মাসে এমন কিছুদিন গেছে, যেদিন তাদের পুরো দিনও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। খাবারের গুণগত মানেও ছাড় দিতে হচ্ছে এসব মানুষের।
আরও পড়ুন: বাড়ছে দাম, ঘামছে জনগণ
সানেম বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারের মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আছে মাত্র ৪০ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার। এর মধ্যে বেশির ভাগ আছে টিসিবির পরিবার কার্ডধারী।
সামনে কোনো পরিবর্তন না হলে শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে পারে এমনটা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৫৬ শতাংশ পরিবার মনে করে, আগামী ছয় মাসে তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। ৪১ শতাংশ পরিবার এটাও বলছে, ভবিষ্যতে তাদের ভিক্ষা বা শর্তহীন সাহায্য নিয়ে চলতে হতে পারে। টিকে থাকার জন্য শহর থেকে গ্রামে যেতে চায় বেশির ভাগ মানুষ।
বিইউ/জেবি