রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝে দেশের রিজার্ভ নিয়ে নানা আলোচনার পর এবার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। শুধু টাকার অংকেই নয়, বছরের ব্যবধানে শতকরা হারেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যেখানে ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকার বেশি। এই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে বিষয়টি উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশই খেলাপি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ যার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই সময়ে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ দেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২১ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এই হিসেবে কেবল টাকার অংকে নয়, বরং শতকরার দিক থেকেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
>> আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি কমছে, অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। যা জুন শেষে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়।
এদিকে, খেলাপি ঋণের হার বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে (সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিক) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর সবমিলিয়ে উল্লেখিত সময়ে এই ছয় ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪২১ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
>> আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন
অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এই সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা।
এছাড়া বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকে (কৃষি, প্রবাসীকল্যাণ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
করোনা মহামারিকালে দুই বছর (২০২০-২১) ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কোনো ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। বর্তমানে এ ধরনের সুবিধাগুলোর বেশিরভাগের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। এরপর থেকে ব্যাপক হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
/আইএইচ