শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বাংলাদেশে ডলারের বিকল্প হতে পারবে কি চীনা মুদ্রা ইউয়ান?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বাংলাদেশে ডলারের বিকল্প হতে পারবে কি চীনা মুদ্রা ইউয়ান?
ফাইল ছবি

অব্যাহত ডলার সংকটের মুখে ব্যাংকগুলোকে চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর অথরাইজড ডিলার শাখা চীনের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে ইউয়ান মুদ্রায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।

সম্প্রতি তীব্র ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনায় আসে।


বিজ্ঞাপন


বিশ্বের পাঁচটি দেশের মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আ আইএমএফ 'হাই ভ্যালু কারেন্সি' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনের ইউয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম।

আইএমএফ-এর কারেন্সি বাস্কেটে ইউয়ান স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৬ সালে। এরপর থেকে আইএমএফ-র পর্যালোচনায় মুদ্রা হিসেবে ইউয়ান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।

ইউয়ানে লেনদেন-গুরুত্ব কোথায়?

চীন হচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ। বাংলাদেশ প্রতিবছর চীন থেকে আমদানি করে ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশে এখনও চীনে এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারেনি।


বিজ্ঞাপন


আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবসময় ডলার ব্যবহার করে আসছে।

আরও পড়ুন: রিজার্ভ নিয়ে ‘সুখবর’ দিলেন অর্থমন্ত্রী

সাবেক ব্যাংকার এবং পর্যবেক্ষক নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ইউয়ান হচ্ছে এমন এটি মুদ্রা যেটি বাংলাদেশ এবং চীন পরস্পরের সাথে বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইউয়ান মুদ্রায় চীনের সাথে লেনদেনের অর্থ হচ্ছে, ডলার সংকটকে এ্যাভয়েড (পাশ কাটিয়ে) করে আপনি লেনদেন করতে পারবেন, যেটা দুটো দেশ গ্রহণ করবে।

তবে চাইলেই ইউয়ানের মাধ্যমে দ্রুত লেনদেন করা যাবে কি না সেটি নিয়ে সংশয় আছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, ইউয়ানের দাম কীভাবে নির্ধারিত হবে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আসে রফতানি এবং রেমিটেন্স থেকে। দুটোই আসে ডলারে। তাছাড়া চীনে যেহেতু বাংলাদেশের রফতানি এক বিলিয়ন ডলারেরও কম সেহেতু ইউয়ানের যোগান বেশি থাকবে না।

‘আমাদের যদি এক্সপোর্ট বেশি হতো তাহলে ইউয়ান বেশি জমা থাকতো,’ বলেন নুরুল আমিন।

dd2

তবে চীনের সাথে কারেন্সি কনভার্সনের মাধ্যমে লেনদেন করা সম্ভব বলে তিনি মনে মনে করেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা দেখবে কারেন্সি কনভার্সনের ক্ষেত্রে টাকার মূল্যমানের সাথে ইউয়ানের মূল্যমান কত হয়।

আরও পড়ুন: ৩৭ বিলিয়নের নিচে রিজার্ভ, সমস্যা দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা

চীন এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী অর্থনীতি। তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। এবং তাদের সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে চীনের কারেন্সির ওপর ভরসা করা যায় বলে জানান আমিন।

ইউয়ান এখনও ডলারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি বলেন, ইউয়ান ডলারের পর্যায়ে যেতে কত সময় লাগবে সেটা জানি না। তবে আমরা চীনের ওপর আস্থা রাখতে পারি ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি হিসেবে।

ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

ইউয়ানে লেনদেন করার ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব একটা সহজ হবে বলে মনে করেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, চীনে রফতানি বেশি না করলে ব্যাংকগুলোর কাছে ইউয়ান কতটা থাকবে?

দেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় নিটওয়্যার রফতানিকারক এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক বলেন, চীনের সাথে ইউয়ানে বাণিজ্য করতে ভালো। কারণ, চীনও ইউয়ানে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

তবে বিষয়টি কার্যকরীভাবে করা যাবে কি না সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে।

চীনের সাথে পুরো লেনদেন হয়তো ইউয়ানে করা যাবে না, তবে আংশিক হয়তো করা যেতে পারে। তাতে ডলারের ওপর কিছুটা চাপ কমতে পারে।

‘ব্যাংকগুলোর কাছে ইউয়ান কতটা আছে সেটা একটা বিষয়। আমরা তো চীনে খুব বেশি এক্সপোর্ট করি না। ব্যাংকগুলোর কাছে যদি পর্যাপ্ত ইউয়ান না থাকে তাহলে ডলার দিয়েই ইউয়ান কিনতে হবে,’ বলেন ফজলুল হক।

তারপরেও ইউয়ানে কিছু লেনদেন করে ডলার যতটা সাশ্রয় করা যায় সেটাই ভালো। ডলার সংকট সামাল দেবার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে - এটি তারই অংশ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

ফখরুল হক বলেন, রফতানিকারকদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তারা কত ডলার আয় করছে। বিষয়টিকে তারা সবসময় ডলারের ভিত্তিতেই হিসেব করেন।

তিনি মনে করেন, যারা রফতানি করবে তারা হয়তো ইউয়ানে পেমেন্ট নাও চাইতে পারে। এক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে। তিনি বলেন, আমি যখন ইউয়ানে এক্সপোর্ট করবো আমি তখন ইউয়ানের সাথে ডলারের একটা হিসেব করবো।

‘ইউয়ানের রেট কেমন হবে? ব্যাংক আমাকে কী রেট দেবে? ডলারের রেট তো ফিক্সড। ইউয়ানে ট্রেড করলে সেটা তো আসবে ব্যাংকের কাছে। ব্যাংক তখন আমাকে ইউয়ানের কী রেট দেবে? এ বিষয়গুলো পরিষ্কার করা দরকার,’ বলেন ফজলুল হক। সূত্র: বিবিসি বাংলা

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর