শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

৩৭ বিলিয়নের নিচে রিজার্ভ, সমস্যা দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

৩৭ বিলিয়নের নিচে রিজার্ভ, সমস্যা দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা

গত জুলাইয়ে আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ৪০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসল। তবে আমদানি কমার পাশাপাশি রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ায় রিজার্ভ কমলেও এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

গতকাল বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আমদানির বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


আকুর বিল পরিশোদের পর রিজার্ভ কমে আসে এমনটা জানিয়ে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, ‘আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ প্রতিবারই কিছুটা কমে আসে। এবারও তাই হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমদানি কমছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ছে। এখন আর আমাদের রিজার্ভ কমবে না। বাড়তেই থাকবে।’

বাজারের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে এই সূচক কমেছে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।

এর আগে, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ৩৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। পরে তা গতবছরের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।


বিজ্ঞাপন


গত ১২ জুলাই আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমতে কমতে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। দুইমাসের মধ্যে তা আরও কমে ৩৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুত এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ৪ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করায় সাধারণত মধ্যরাতের পরেই বিলের অর্থ কেটে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক পরদিন সেটা রিজার্ভ থেকে বাদ দেয়।

এর আগে, মার্চ-এপ্রিল মেয়াদে আকুর ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ। তার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে পরিশোধ করা হয়েছিল ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

৪০ বিলিয়নের নিচে রিজার্ভ নেমে আসার পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। এখন ৩৭ বিলিয়নে পৌঁছায় এই উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে অনেকের মধ্যে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতির গবেষক আতিউর রহমান এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু দেখছেন না।

তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নামলেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা, আমদানি কমছে। বর্তমানের এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ছে। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে রিজার্ভ বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’

ডলারের বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই মাস সাত দিনে (১ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) রিজার্ভ থেকে ২৬৫ কোটি (২.৬৫ বিলিয়ন) ডলারের মতো বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির কারণেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ার পরও রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর