দেশের বাজারে পেঁয়াজের উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও এর দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহেই পাইকারি বাজারে মূল্য কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে সেই দাম কমার প্রভাব পৌঁছায় না। ফলে ভোক্তাদের রান্নাঘরে পেঁয়াজের ঝাঁজ আগের মতোই রয়ে গেছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, ঝিগাতলাসহ কয়েকটি কাঁচা বাজারে এমন দর জানা যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। ইন্ডিয়ান প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১৫ টাকায়। পাশাপাশি, প্রতি কেজি দেশি রসুন ১৮০ টাকা ও ইন্ডিয়ান রসুন ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা ও ইন্ডিয়ান রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন ব্যয় ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাজারে দামের তারতম্য তৈরি হচ্ছে। এতে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে তা কমাতে গড়িমসি করা হয়। সরকারের তেমন কোনো মনিটরিং না থাকায় ক্রেতাদের পকেট কেটে নেয় খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা।
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা বাজারে ক্রেতা আব্দুর রশীদ বলেন, প্রতিদিনই শুনি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। কিন্তু খুচরা বাজারে এসে দেখি দাম কমে না। সবজির দামে স্বস্তি আসলেও পেঁয়াজ এর দাম যেন একাই নিজের নিয়মে চলে। সরকারের কোনো তদারকি নেই বাজারগুলোতে। যার ফলে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দর বাড়িয়ে রাখে।
রায়েরবাজার কাঁচাবাজারের ক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারের কোনো মনিটরিং সিস্টেম নেই। একবার যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তা আর কমার কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। মাঝে কিছুটা দাম কমলেও আগের রূপেই ফিরে গেছে পেঁয়াজের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার শক্ত অবস্থানে না যাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হোক।
অন্যদিকে, ঝিগতলা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী রহমত মিয়া দাবি করছেন, হঠাৎ দাম বাড়ার পর বাজার স্থিতিশীল হতে সময় লাগে। পাশাপাশি বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি কম হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেশি পড়ছে। সরবরাহ আছে ঠিকই, কিন্তু চাহিদা খুব বেশি। এজন্য দামটা বেশি রাখতে হয়।
টাউন হল বাজারের ব্যবসায়ী আজমত মিয়া বলেন, প্রায় ৩০ বছর যাবৎ কাঁচামালের ব্যবসা করি। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম আমাদেরও চিন্তায় ফেলে। এ নিয়ে অনেক ক্রেতার সাথে রাগারাগি হয়। তবে, পেঁয়াজ সরবরাহ থেকে শুরু করে বাজারে আসা পর্যন্ত কয়েকটি ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। এতে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ে দাম বেড়ে যায়। আমাদের বাধ্য হয়েই দাম বাড়িয়ে রাখতে হয়। এতে আমাদের সঙ্গে ক্রেতাদের রাগারাগি হয়। আমরাও চাই সরকার নিয়মিত পাইকারি বাজারগুলো তদারকি করুক। তাহলে আমাদের স্বস্তি আসবে; ক্রেতারাও খুশি হবে।
বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি ও শুল্কছাড়ের উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। বাজারে কার্যকর তদারকি না থাকাই দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। সরকারি নজরদারি ও আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে দ্রুত পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যাতে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঝাঁজে ভোক্তাদের আর কাঁদতে না হয়।
একেএস/এফএ

