- ব্যাংকে ১২২.৫০ টাকার মধ্যে, খোলাবাজারে ১২৭ টাকা
- ডলারের সংকট নেই, চাহিদাও তুলনামূলক কম
- কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়ার পর খোলাবাজারে ডলারের দামে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে অসাধু চক্র। ব্যাংকিং চ্যানেলে এই হার ১২২.৫০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে খোলা বাজারে এক লাফে ১২৭ টাকায় উঠে গেছে। এ ব্যবধান তৈরি হওয়ায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যদি ডলারের দাম পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেশি দাবি করে, তাহলে তা পুরোপুরি অন্যায়। তিনি জানান, ব্যাংক থেকে এত বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করে বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জ হাউসকে জরিমানা করা হবে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিলের মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান জানান, বর্তমানে ব্যাংকে ডলারের কোনো সংকট নেই। কারণ প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হচ্ছে, আর সেই বিপরীতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ডলার দেশে আসছে। ফলে বড় কোনো বিদেশি পেমেন্টের চাহিদা না থাকায় বাজারে বাড়তি চাপও দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে ডলারের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। মতিঝিলের আদমজী কোর্ট এলাকায় ডলার কিনতে আসা হামজা ব্যাপারী জানান, তার ছেলের বিদেশযাত্রার জন্য ২,৫০০ ডলার প্রয়োজন, কিন্তু ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০–৩০০ ডলার দেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তিনি বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ ঘুরছেন, যেখানে প্রতি ডলারে পাঁচ টাকা বেশি দাবি করা হচ্ছে। অনেক এক্সচেঞ্জ হাউস আবার প্রকাশ্যে ডলার না রাখলেও আড়ালে উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি করছে।
বিজ্ঞাপন

রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও গুলশান এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নোটিস বোর্ডে প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ১২৪ টাকা লেখা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ডলার পাওয়া যাচ্ছে ১২৭ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, হজ মৌসুমে ডলারের চাহিদা বেড়েছে, পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির কারণে বাজার কিছুটা উত্তপ্ত।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা ডলারের বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছে। বর্তমানে চার সদস্যবিশিষ্ট সাতটি টিম মাঠে কাজ করছে যাতে কেউ মজুদদারি কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেফারেন্স রেট অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি ডলারের মূল্য ১২২.৪৩ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি।
ডলারের বিনিময় হার এখন আর কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত নয়। আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই দায়িত্ব ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলে বর্তমানে বিনিময় হার নির্ধারণ হচ্ছে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। তবে এই বাজারভিত্তিক পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের।
বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জামান বলেন, মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ১২৪ থেকে ১২৬ টাকায় ডলার বিক্রি করছে, যা ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও ক্যাশ ডলারের ক্ষেত্রে সেটাই স্বাভাবিক। তবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে আরও স্পষ্ট বার্তার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
টিএই/জেবি

