বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ঢাকা

সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চায় ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চায় ব্যবসায়ীরা

বর্তমান অস্থিতিশীল বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, এমতাবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ব্যবসায়িক হয়রানি, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, আয়কর ও ভ্যাট প্রদানে জটিলতা এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশানুরূপ নয় বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন ব্যবসায়ীরা। 

শনিবার (২৬ এপ্রিল) ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও আদাবর অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলেন তারা। 


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে উদ্ভূত নানা চ্যালেঞ্জ, কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সংকট, আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা এবং সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যার ফলে বিশেষকরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের এসএমইখাতের উদ্যোক্তারা।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও পূর্বানুমানযোগ্য ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তাসকীন আহমেদ বলেন, ডিসিসিআই’র পক্ষ হতে আসন্ন বাজেটে উৎসে করের হার যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা, মূসক হার সিঙ্গেল ডিজিটে নির্ধারণ ও অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য ১ শতাংশ হারে মূসক নির্ধারণ এবং ভ্যাট আপ চালুর প্রস্তারের পাশাপাশি সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশের উন্নয়ন হবে, সেই সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ।

তিনি আরো বলেন, শিল্পায়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি প্রক্রিয়ার সহজিকরণ, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে অটোমেশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে গতিশীলতা আনায়ন এবং সরকারের পক্ষ হতে যুগোপযোগী নীতি সহায়তার কোন বিকল্প নেই।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কর দিতে চায়, কিন্তু আমরা কোনও হয়রানি চাই না।

আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কে তিনি বলেন, যে কোনো স্তরে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আইনের শাসন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ মার্চ একটি মাস্টার সার্কুলার প্রদান করা হয়েছে, যেখানে এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তির সীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেয়াদি ঋণের সময়সীমা ৫ বছর থেকে ৭ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন স্কিমের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে, যেখানে এখাতের উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এ ঋণের হার মাত্র ৫ শতাংশ।

তিনি উল্লেখ করেন, বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিকল্পে ক্যাশ রিজার্ভ রেসিও (সিআরআর) ৫.৫০ শতাংশ হতে ৩ শতাংশ-এ নামিয়ে আনা হয়েছে।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম)-এরে অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিলন শেখ বলেন, সরকারের মোট রাজস্বের প্রায় ৮০ শতাংশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করতে হয়, যা অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ।

তিনি জানান, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় এবছর ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ৩ মাসে এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভ্যাটের আওতা এবং ভ্যাট আদায় বৃদ্ধিতে মোবাইল অ্যাপ প্রবর্তনের প্রস্তাব সরকার ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করতে পারে। ভ্যাটের বিষয়টিকে জটিল ভেবে দূরে না থেকে এ বিষয় জানার পরিধি বাড়ানোর জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। 

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (তেঁজগাও বিভাগ) মো. আলমগীর কবির বলেন, গত দুইমাসে এ অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, সেই সাথে মামলার পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

তিনি জানান, গত ২৭ মার্চে পুলিশের ব্লক রেইডের মাধ্যমে ৬৩জন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সম্প্রতি শুধুমাত্র মোহাম্মদপুর এলাকায় একদিনে বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ৭১ জনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে এ এলাকায় অ্যাক্টিভ পুলিশিংয়ের আওতায় ৬৩টি পেট্রোলিং প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়াও অপরাধ নির্মূলে জনগণকে তথ্য দিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে মোহাম্মদপুরের শপিংমলগুলোতে নিরাপত্তা দিতে পুলিশকে অবহিত করার এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।   

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক, তেঁজগাও জোন) তানিয়া সুলতানা যানজটের নিরসনের জনগণের সচেতনতা বাড়ানো ও ট্রাফিক আইন মেনে চলার উপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, তেঁজগাও জোনে বর্তমানে ৬৩২ জন ট্রাফিক পুলিশ কর্মরত রয়েছে, স্বল্প জনবল দিয়ে বৃহৎ অঞ্চলে ট্রাফিক সেবা নিশ্চিত করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি কাজ।   

মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন— টোকিও স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সদস্য মোহাম্মদ হীরু এবং ফারুক আহমেদ, রাপা প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন, টাউন হল বাজার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি লুৎফর রহমান বাবুল, বাংলাদেশ ব্রিকস অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান (বাবুল) এবং ট্যাক্স কনসালটেন্ট প্রবীর কুমার পাল, এফসিএ প্রমুখ।

ভ্যাট প্রদানের প্রক্রিয়া সহজিকরণ ও ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, ভ্যাটের অ্যাপ প্রবর্তন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, চাঁদাবাজি বন্ধ, যানজট নিরসন, ঋণের সুদের হার হ্রাস ও ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজিকরণ এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি হ্রাস প্রভৃতি বিষয়ে উপর জোরারোপ করেন উপস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ।        

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান এসময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআই’র নতুন সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে ডিসিসিআই’র মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।

উল্লেখ্য, রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও আদাবর অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিরূপণ ও করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় ওই এলাকার ১০টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দসহ বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম), অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিলন শেখ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (তেঁজগাও বিভাগ) মো. আলমগীর কবির উক্ত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় যোগদান করেন।

এমআর/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর