সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি: আশাহত শিল্প খাতের নতুন উদ্যোক্তারা

মহিউদ্দিন রাব্বানি
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩২ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

# গোটা অর্থনীতি ও উৎপাদনমুখী শিল্পে ধস নামবে
# রফতানিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে শিল্পখাত
# উৎপাদন খরচ বাড়বে, প্রভাব পড়বে বাজারে

এক লাফে নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে শিল্প খাতের নতুন বিনিয়োগ।


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার একদিকে বিনিয়োগ পরিবেশের তৈরির কথা বলছেন। অন্যদিকে ঝুঁকিতে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
পাশাপাশি পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সামগ্রিক শিল্পখাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এক লাফে ৩৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাহস হারিয়ে ফেলবেন নতুন উদ্যোক্তারা। ফলে সামগ্রিক বিনিয়োগেও বাধাগ্রস্ত হবে।

এদিকে অতিমারি করোনা সংক্রমণের সময় থেকে শুরু করে ২০২৪-এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল তাদের। 


বিজ্ঞাপন


দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ালে গোটা অর্থনীতি ও উৎপাদনমুখী শিল্পে ধস নামবে এবং রপ্তানিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে বলে জানিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে শিল্পের গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়াল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রোববার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিইআরসির শুনানিকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে।

গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে ‘বেআইনি’ আখ্যায়তি করে তা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল ১০০ শতাংশের বেশি, বিইআরসি বাড়িয়েছে ৩৩ শতাংশ।

শিল্পগ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। কারখানার নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে ৪২ টাকা হয়েছে। নতুন দাম ১৩ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হবে। নতুন সংযোগ বা পুরোনো সংযোগে যারা গ্যাসের লোড বাড়াবেন, তাদের এই দাম দিতে হবে। পুরোনো সংযোগ ও লোড অপরিবর্তিত থাকলে গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত থাকছে।

9

এর আগে গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে ‘বেআইনি’ আখ্যায়তি করে তা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল ১০০ শতাংশের বেশি, বিইআরসি বাড়িয়েছে ৩৩ শতাংশ।

গত জানুয়ারিতে পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড প্রাকৃতিক গ্যাসের শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ শ্রেণিতে নতুন, প্রতিশ্রুত এবং বিদ্যমান (অনুমোদিত লোডের অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী) গ্রাহকের মূল্যহার পুনর্নির্ধারণের জন্য কমিশনে প্রস্তাব জমা দেয়। এই প্রস্তাবের ওপর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গণশুনানি করা হয়।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, নতুন শিল্পের পাশাপাশি অনুমোদিত গ্যাসের বাইরে ব্যবহার করলে তাদেরও বেশি বিল দিতে হবে। ফলে চলমান অনেক শিল্পের খরচ বাড়বে। অনেক পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, কাঁচামালের দাম বাড়বে। শেষে পণ্যের দাম বাড়বে, যা সবাইকে ভোগাবে।

গ্যাসের নতুন দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের নিট পোশাক রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্তমানে গ্যাসের যে দাম সেটাই তো পরিশোধ করতে পারছে না শিল্পমালিকেরা। আমার মনে হচ্ছে না এই দামে নতুন কোনো উদ্যোক্তা শিল্পে বিনিয়োগ করবে। তবে বিইআরসিকে ধন্যবাদ অন্তত পুরাতন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম আগের মতোই রেখেছে। এরপরও অনুরোধ থাকবে গ্যাসের দাম যেন আরও একটু কমানো হয়।

তিনি আরও বলেন, শিল্প গ্যাসের আগের দামেই নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। এরপর আরও দাম বাড়ালে নতুন করে শিল্প স্থাপনের আগ্রহ হারাবেন বিনিয়োগকারীরা।

এমআর/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর