করোনাকালে দেশে প্রসার ঘটেছে অনলাইন ব্যবসার। ফেসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা যুগিয়েছেন হাজার হাজার বিক্রেতা৷ আবার ঘরে বসেই পণ্য পাওয়ার সুবিধা নিতে অনলাইনে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন ক্রেতারাও। সব মিলিয়ে গত প্রায় চার বছরে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের একটি অংশ নির্ভর হয়ে পড়েছে ফেসবুক ও ইউটিউবের ওপর।
কিন্তু অনলাইনে যারা ব্যবসা করেন এমন উদ্যোক্তারা বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়েছেন। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার নজিরবিহীনভাবে সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। পাঁচ দিন পর ব্রডব্যান্ড এবং ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট এলেও এর ধীরগতি ভোগাচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো এখনো চালু হয়নি। ভিপিএন দিয়ে বিকল্প উপায়ে কেউ কেউ ফেসবুক চালালেও তাতে কাঙ্ক্ষিত রিচ হচ্ছে না। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্তত কয়েক মাস পিছিয়ে গেছেন তারা।
উত্তরা থেকে ঘরোয়া খাবার উৎপাদন ও বিক্রি করেন নূর এ মেহজাবিন। তার ব্যবসা চলে ফেসবুক পেইজ হ্যালো ফ্রম নূর'র কিচেন- এর মাধ্যমে। তবে ইন্টারনেটে ধীরগতি ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই উদ্যোক্তা৷
বিজ্ঞাপন
মেহজাবিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার টার্গেট থাকে প্রতি মাসেই সেল আগের মাসের তুলনায় বাড়ানো। দেশের এই প্রভাব আমার বিজনেসে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রিচ কমে গেছে, পোস্ট দিলেও রিচ বাড়ছে না।’
এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আবারো আগের রিচে ফিরিয়ে আনতে অন্তত এক মাস প্রচুর খাটনি দিতে হবে।’
একই তথ্য জানিয়েছেন অনলাইনে পোশাক বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান মেহনাজ কালেকশনের কর্ণধার আজনুভা মেহনাজ।
কম্বোওয়ালি নামে এক ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করেন নাবিলা ইসলাম। ইন্টারনেট ও ফেসবুকের সীমাবদ্ধতা এই উদ্যোগটাকে দারুণভাবে ভোগাচ্ছে। তিনি বলেন, 'রিচ নাই এখন। তাই পোস্টও দিচ্ছি না কোনো।'
এদিকে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ে গড়ে তোলা ফেসবুক গ্রুপগুলোও গত ১০ দিনে নিজেদের অবস্থান হারিয়েছে৷ সক্রিয় না থাকার কারণে ফেসবুক সয়ংক্রিয়ভাবে পেইজগুলোতে ক্রেতা সমাগম কমিয়েছে। একই সঙ্গে কিছু দিন আগেও নিয়মিত সক্রিয় ক্রেতাদের অনেকেই ফেসবুকে আসতে পারছেন না। ফলে ইন্টারনেট চালু হলেও এখনো থমকে আছে অনেকের ব্যবসা।
ফেসবুক পেইজ ব্যবহার করে হোম ডেকর প্রোডাক্ট বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান নন্দিতা কুটির। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার অবস্থায় তাদের পেইজে ক্রেতা সমাগমের জন্য বুস্ট চলছিল। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুস্ট চলমান ছিলো। কিন্তু দেশের কেউ ইন্টারনেট না পাওয়ায় ক্রেতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
নন্দিতা কুটিরের পরিচালক ইসরাত লামিয়া বলেন, 'ইন্টারনেট চালু হলেও ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। এক মাসের তিন ভাগের এক ভাগ সময় পেইজ নিস্ক্রিয় ছিল। দেশের কেউ ইন্টারনেট না পেলেও ফেসবুকের কাছে এটা একটা ফ্যাক্ট। ফলে আমাদের পেইজের রিচ এখন কম। পাশাপাশি ইন্টারনেট এলেও ফেসবুক খোলেনি। এতে ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের জন্য এটা একটা অপূরণীয় ক্ষতি।'
ইলেকট্রনিক গ্যাজেট পণ্য নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করেন মো. ফারুক। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, 'ইভ্যালি আর ই-অরেঞ্জ তো আমাদের শেষ করে দিয়ে গেছে। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কিছুটা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। সেখানেও বাধা! এভাবে চললে উদ্যোক্তা তৈরি হবে না।'
মো. ফারুক বলেন, 'আমরা তো সরকারের কাছে চাকরিপ্রত্যাশী না। সরকারের বোঝাও হইনি। আমরা নিজেরা কিছু করতে চাচ্ছি। অনুদানও চাইনি। ইন্টারনেট সেবাটা ঠিক রেখে, ফেসবুককে ঠিক রেখে আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া উচিত।'
কারই/জেবি