শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়েও মূল্যস্ফীতির প্রভাব

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৪, ১০:৩৯ এএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়েও মূল্যস্ফীতির প্রভাব

টানা ২৬ মাস ধরে দেশের গড় মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি। অর্থনীতির পরিভাষায় মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি কম হলে সেটি তার অর্থনীতির সংকটকে ইঙ্গিত করে। দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের পরিবারগুলোর আয় কমে গেছে। উপায় না পেয়ে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন মানুষ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের শিক্ষাব্যয়ও বাড়ছে প্রতি মাসে। এর প্রভাব পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়েও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে পরিবারের আয় কমায় ধারাবাহিকভাবে কমেছে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আমানত। তবে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ।


বিজ্ঞাপন


চলতি বছরের মার্চ মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮০টি। এর আগের মাসে পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৯ হাজার ৬৮৮টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৪৫ হাজার ৯২টি। আবার মার্চ মাস শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। তার আগের মাসে শিক্ষার্থীদের হিসাবে আমানত ছিল ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের তুলনায় আমানত কমেছে ৪৪ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

শত চেষ্টায়ও বাড়ছে না রিজার্ভ, কমছে না মূল্যস্ফীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মার্চ শেষে মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮০টি। এর মধ্যে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৯টি হিসাব গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে। ওই মাসে ছেলেদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে শহরে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৯টি, গ্রামে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬১টি।

আরও মেয়েদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২০ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০টি। যার মধ্যে শহরে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬২টি এবং গ্রামে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮টি।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ছেলেদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে শহরে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৯টি আর গ্রামে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬১টি।

অন্যদিকে মেয়েদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২০ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০টি। যার মধ্যে শহরে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬২টি এবং গ্রামে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮টি।

আরও পড়ুন

হতাশায় গ্রাহকরা, কী হচ্ছে আইসিবি ব্যাংকে?

তথ্যমতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৪৩টি। আগস্টে এ ধরনের হিসাব খোলা হয় ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৮২০টি। সেপ্টেম্বরে এসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাবের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ২১০টি। পরের মাস অক্টোবরে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯৪টি। নভেম্বরে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৯০৭টি এবং সবশেষ ডিসেম্বর মাসে হিসাব আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টিতে।

এছাড়া জানুয়ারিতে ৪০ লাখ ৭৪ হাজার ১৫টি এবং ফেব্রয়ারি মাসে দাঁড়ায় ৪১ লাখ ২৯ হাজার ৬৮৮টিতে।

আমানতের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা আগস্টে ২ হাজার ২৮৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৩২ কোটি, অক্টোবরে ২ হাজার ২০২ কোটি, নভেম্বরে ২ হাজার ১৯৯ কোটি, ডিসেম্বরে ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

‘স্বেচ্ছায়’ মার্জারের কথা বলে ‌‘নির্দেশ’ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক?

জানুয়ারিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩৬ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ১০৯ কোটি এবং সর্বশেষ মার্চে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৪ কোটিতে।

এর আগে ২০২৩ সালের মার্চের শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৫ শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছিল। এ সময় আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহী করতে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচির পুনঃপ্রবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেশ সফলতা পায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে। ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়।

টিএই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর