সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘রফতানি প্রণোদনা হ্রাসের সিদ্ধান্ত পোশাক খাতে বিপর্যয় ডেকে আনবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

‘রফতানি প্রণোদনা হ্রাসের সিদ্ধান্ত পোশাক খাতে বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ফাইল ছবি

দেশে ডলার সংকট কাটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক, কৃষি, চামড়াসহ সবধরনের রফতা‌নি‌তে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত পোশাক শিল্পে ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পদক্ষেপটি পুনঃবিবেচণার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বিজিএমইএর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিগত ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানির বিপরীতে রফতানি প্রণোদনা/ নগদ সহায়তা বিষয়ক একটি সার্কুলার জারি করেছে, যার মাধ্যমে প্রচলিত নগদ সহায়তার হার ও কাঠামোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তন শিল্পের জন্য মোটেও সহায়ক ও সময়োপযোগী নয়, বরং এটি শিল্পে অনাকাঙ্খিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে।


বিজ্ঞাপন


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত সার্কুলারে ৫টি প্রধান রফতানি পণ্যের উপর নগদ সহায়তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পণ্যগুলো হলো টি-শার্ট, সুয়েটার, নিটেড শার্ট, পুরুষদের আন্ডার গার্মেন্ট এবং ওভেন ট্রাউজার ও জ্যাকেট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ৫টি পণ্যের রফতানি মূল্য ছিল ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা আমাদের মোট পোশাক রফতানির ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

বিজিএমইএ বলছে, শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা ছাড়া বাকি সব প্রণোদনার হার ২৫-৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, যদিওবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনার হার কমানো হয়নি, তবে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার উৎপাদন ও রফতানি কিছু বেসিক পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিশেষকরে টি-শার্ট, ট্রাউজার ও সুয়েটার। এই পণ্যগুলো সামগ্রিক প্রণোদনা ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ায় মূলত এসব পণ্য রফতানিকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো কোনো প্রণোদনাই পাবে না। আমাদের মোট পোশাক রফতানিকারী প্রতিষ্ঠিানের মধ্যে ৬০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির।

আরও পড়ুন
গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে সিঙ্গাপুর বন্দরের সহযোগিতা চায় বিজিএমইএ

এক্ষেত্রে আরও উল্লেখ্য, WTO এর ASCM বিধান অনুযায়ী এই ৫টি পণ্যের উপর নগদ সহায়তা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে WTO Complaint পদ্ধতিতে বিকল্প প্রণোদনা প্রবর্তনের বিষয়ে সার্কুলারটিতে কোনো উল্লেখ নেই, যদিও অনেক মধ্যম আয়ের দেশ তাদের শিল্পের জন্য সরাসরি প্রণোদনা না দিয়ে বিকল্প প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বিকল্প প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি আমাদের দেশেও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা কর্তন শিল্প ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি না।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ করে যখন আমাদের প্রধান রফতানি বাজারগুলোর পোশাক আমদানি ও চাহিদা ভালো নয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে আমরা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির চাপে আছি তখন এরকম একটি পদক্ষেপ শিল্প ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের যে নিম্নমুখী প্রবণতা ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যে চাপ রয়েছে, সেই বাস্তবতায় এরকম একটি পদক্ষেপ আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেই সহায়ক নয় বরং তা এই সংকটকে আরও ঘনিভূত করবে।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের প্রণোদনা প্যাকেজ যখন কাট-ছাঁট করা হচ্ছে তখন আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের শিল্পের জন্য সহায়তা বৃদ্ধি করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ভিয়েতনামের এফটিএ গত বছর কার্যকর হয়েছে, ফলে ইউরোপে তাদের শুল্ক প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে, যা ২০৩০ নাগাদ শুল্কমুক্ত হবে। পক্ষান্তরে, ২০২৯ এর পর আমরা ডাবল ট্রান্সফরমেশনের চ্যালেঞ্জে পড়ব। এরকম একটি সময়ে WTO বিধান অনুযায়ী যতদিন আমরা স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা ভোগ করছি ততদিন পর্যন্ত নগদ সহায়তা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেয়া অধিক যুক্তিযুক্ত ছিল, যার মাধ্যমে শিল্পকে আমরা টিকিয়ে রাখতে পারতাম।

আমরা আশাকরি বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করে আমাদের অর্থনীতিকে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার শিল্প ও দেশের স্বার্থে এই পদক্ষেপটি পুনঃবিবেচণা করবে।

টিএই/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর