বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা কমিটির মেয়াদ হবে এক বছর। কিন্তু পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ উপজেলা কমিটি চলছে ছয় বছরের অধিক সময় ধরে।
জানা যায়, সব শেষ ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২১ সদস্য বিশিষ্ট মির্জাগঞ্জ উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটি গঠনের দশ মাস পরে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি মাসে ইউনিয়নের কমিটি গঠন ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এতে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব মৃধাকে বহিষ্কার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা কমিটি এবং নবগঠিত ৫ ইউনিয়নের কমিটির উপর স্থগিত আদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসেন।
বিজ্ঞাপন
এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়। তখন ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ নিজ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করে তৎকালীন সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও নবগঠিত পাঁচ ইউনিয়ন কমিটি ও উপজেলা কমিটির উপর আরোপিত স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকেই স্থগিত হওয়া এই কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা।
স্থগিত হওয়া ২১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জুয়েল এক সন্তানের জনক। সাত জন সহ-সভাপতি ছয়জন বিবাহিত।
সাধারণ সম্পাদক রাকিব মৃধার বিরুদ্ধে রয়েছে বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। প্রভাব খাটিয়ে মায়ের নামে ভিজিডির চাল নেওয়া, কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লতিফ মৃধার ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা সোহেল মৃধাকে দিয়ে অবৈধ মাটি লুট করে বিক্রি করার একাধিক নিউজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন। বড় ভাইকে দিয়ে ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পাঁচ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৩ জন বিবাহিত। পাঁচ সংগঠনের সম্পাদকের মধ্যে সুবিদখালি সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দুজন একজন চাকরি নিয়ে আছেন এলাকার বাইরে। প্রচার সম্পাদক ফিরদাউস সিকদার বাবু ও চাকরি নিয়ে আছেন এলাকার বাইরে।
পদ প্রত্যাশী অনেক নেতা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। অপরদিকে স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার না করায় ঝিমিয়ে পড়েছে নিয়ে কার্যক্রম। বিতর্কিত এইসব নেতারা এখনও নিজেদেরকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এবং অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের অভিযোগ রয়েছে এই স্থগিত হওয়া কমিটির বিরুদ্ধে।
একাধিক পদ প্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা বলেন, যেখানে তাদের নিজেদেরই বৈধতা নেই সেখানে তারা কিভাবে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেন। আমাদের তৃণমূল কর্মীদের একটাই দাবি অতি দ্রুত উপজেলা কমিটির বিতর্কিত ব্যক্তি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়া হোক।
বহুবিভক্ত ও স্থগিত হওয়া কমিটি নিয়ে বিরক্ত ও বিব্রত মির্জাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিতর্কিত এই কমিটি ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং নতুন কমিটি গঠন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে লাইন কেটে দেয়।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ বলেন, জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যেসব ইউনিটের মেয়াদ উত্তির্ন হয়েছে। এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস