মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

এবার তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধ

সাইমূম ইভান
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩, ১০:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

মাথার ওপর ছাদ ছিল না। থাকতেন অন্যের বাড়িতে। কল্পনায়ও ছিল না একদিন তাদেরও বাড়ি হবে। খোঁটা শুনতে হতো ভূমি ও গৃহহীন হওয়ায়। আশপাশের বাড়ি ও ভূমির মালিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য তো ছিল নিত্যদিনের ঘটনা— বলছিলাম সিলেটের প্রান্তিক জনপদ গোয়াইনঘাটের নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের একশ পরিবারের কথা। 

সম্প্রতি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে এসব পরিবারের। নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এসব মানুষ খুঁজে পেয়েছেন নিজস্ব ঠিকানা। জানা গেছে, এবার প্রকল্পটিকে দেশের মডেল আশ্রয়ণ প্রকল্পে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এখানে ঘরপ্রাপ্তদের আয় বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বী করতে নেওয়া হয়েছে নানান পরিকল্পনা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ১ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে সব পরিকল্পনা। নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পকে রূপদান করা হবে মডেল প্রকল্পে। 


বিজ্ঞাপন


গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান জানান, নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হবে দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম। এই প্রকল্পে আশ্রয় পাওয়া প্রতিটি পরিবার হবে স্বাবলম্বী। প্রতিটি নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে তাদের কর্মদক্ষ করে তোলা হবে। এজন্য প্রকল্পের একশত পরিবারকে নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করা হচ্ছে। সরকারের সহযোগিতা ও নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টায় এই সমিতির মাধ্যমেই তারা নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাবে। প্রকল্পের প্রতিটি পরিবারের নারী সদস্যদের সেলাইসহ হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের উপার্জনক্ষম করে তোলা হবে। পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালনের জন্য তাদের দেওয়া হবে সরকারি সহায়তা।

তিনি জানান, নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ৫ দশমিক ৩৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে একশত ঘরের ভিটে ব্যবহার হয়েছে ২ একর জায়গা। বাকি ৩ একর ৩৪ শতক জায়গা ঘিরে নেওয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যান। ইতোমধ্যে প্রকল্পের চারপাশে এক কিলোমিটার গভীর খাল খনন করা হয়েছে। সমবায়ের ভিত্তিতে এই খালে মৎস্য চাষ করবেন প্রকল্পের পরিবারগুলো। এতে বছরে বড় রকমের আর্থিক সহায়তা আসবে পরিবারগুলোতে। এছাড়া এই খালের পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পার্শ্ববর্তী ৩শ’ হেক্টর জায়গা চাষাবাদের আওতায় আসছে। এসব জায়গায় প্রকল্পের সদস্যদের জন্য বর্গাচাষের পাশাপাশি শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পটির সদস্যদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১ হাজার ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। সমবায়ের ভিত্তিতে এগুলো ভোগ করবেন প্রকল্পের পরিবারগুলো। এছাড়া প্রতিটি পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি করে পুষ্টি বাগান। যেখানে তারা নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য সবজি চাষ করছেন।

একটি সবুজ ও পরিচ্ছন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলতে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে প্রকল্পের পরিবারগুলোকে সচেতন করা হবে জানিয়ে ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, গৃহাস্থলীর বর্জ্য থেকে কীভাবে কম্পোস্ট সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যায় এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্প এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সমবায় সমিতির দায়িত্বশীলরা ভূমিকা রাখবেন। এছাড়া প্রকল্পে সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৮শ’ মিটারের মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্টেন স্কুল। তবে শিশুদের জন্য প্রকল্পে একটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় করার পরিকল্পনার কথা জানালেন ইউএনও। এছাড়া নামাজ আদায় ও শিশুদের মক্তব শিক্ষার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের বিষয়টিও মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে বলে জানান তাহমিলুর রহমান।

ইউএনও জানান, অনেক স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর হস্তান্তরের পর কেউ আর খোঁজ রাখে না। কিন্তু নোয়াগাঁও প্রকল্পটি আমরা দেশের একটি মডেল আশ্রয়ণ করতে চাই। গত ২২ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি।

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর