বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে ভোলার মানুষ!

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে ভোলার মানুষ!

দ্বীপ জেলা ভোলার শীতের ঐতিহ্য ছিল মিষ্টি খেজুর রস। মাত্র এক যুগের মাথায় খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে এ জেলার মানুষ। রসের পায়েস এখন শুধুই স্মৃতি। শীতের সকালে ভোলার পল্লী এলাকায় মানুষের ঘুম ভাঙত রস বিক্রেতার হাঁকডাকে। এখন আর সেই ডাক শুনতে পাওয়া যায় না। শীতে গ্রাম্য হাটে খেজুর গুড়ের সেই মনমাতানো ঘ্রাণ এখন আর নেই। এখন যশোর থেকে আসা চিনি মেশানো ভেজালে ভরা নিম্নমানের গুড় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ইটভাটায় খেজুরগাছ পোড়ানোসহ নানা কারণে অবাধে গাছ কেটে ফেলায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জেলায় লক্ষাধিক খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হতো। রস দিয়ে পিঠা, পায়েস খাওয়ার পাশাপাশি দেড়শ টন গুড় উৎপাদন করা হতো। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করে খেজুরগাছ ও বাঁশের গোড়া পোড়ানোর অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাঁশের গোড়া না থাকায় ভোলার ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য খেজুরগাছ নিধন শুরু হয়। গত এক যুগে ক্রমেই খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে খেজুর রস কমতে থাকে। ক্রমান্বয়ে এখন তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে।


বিজ্ঞাপন


ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ চরপাতা গ্রামের গাছি মহিউদ্দিন জানান, আগে তিনি শীত মৌসুমে প্রায় ৭০টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন। সেই রস দিয়ে পিঠা, পায়েস খাওয়ার পাশাপাশি গুড় তৈরি করে বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতেন। কিন্তু এখন সেই খেজুরগাছ নেই। অধিকাংশ গাছ কেটে জমিতে এখন তিনি চাষাবাদ করছেন।

bholaএকই গ্রামের চা ব্যবসায়ি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এক সময় ভোলার গ্রামগঞ্জে রাস্তার পাশে ও ধানক্ষেতের আইলে প্রচুর খেজুরগাছ দেখা যেত। আমরা রাতে গাছ থেকে রস পেড়ে নাশতা খেতাম। দাওয়া রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হতো। সেই গরম গুড় মুড়ি দিয়ে মেখে খেতে খুবই ভালো লাগত। এখন এগুলো শুধুই ইতিহাস। গ্রামগঞ্জে আগের মতো আর সারিবদ্ধ খেজুরগাছ নেই। ইটভাটার কারণে তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, এখন থেকে একযুগ আগে প্রতি হাঁড়ি রস বিক্রি হতো ৫০-৬০ টাকা ধরে। কিন্তু এখন সেই হাঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা ধরে। যার ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর ভাগ্য রস জুটে না।

ভোলা যুব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম রুবেল বলেন, ভোলায় এখন আর আগের মতো সারিবদ্ধ খেজুরগাছ চোখে পড়ে না। আগে শীত এলেই খেজুর রসের নাশতা খেতাম। এখন তা শুধুই স্বপ্ন। ইটভাটার কারণে খেজুরগাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন যদি সবাই বেশি করে খেজুরগাছ রোপণ করে তাহলে এই বিলুপ্ত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।


বিজ্ঞাপন


ভোলা সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান যুগের মানুষ খেজুর গাছের গুরুত্ব বোঝে না। তারা অবাধে খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। আগে অতিথি আপ্যায়নে খেজুর রসের পায়েসের বেশ কদর ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা হারিয়ে যাচ্ছে।

bholaজেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. তোতা মিয়া বলেন, খেজুরগাছ পরিবেশ ও ভূমিক্ষয় রোধে খুব উপকারী। মানুষ সামান্য স্বার্থে উপকারী গাছটি নিধন করে পক্ষান্তরে তাদেরই ক্ষতি করছে। পরিবেশ রক্ষায় এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুরগাছ লাগানোর দাবি জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিসার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান জানান, খেজুর গাছের রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ইতিমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাস্তা ও বেড়িবাঁধ এলাকায় তাল গাছ ও খেজুর গাছের চারা রোপণের উদ্যাগ হাতে নিয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় চারা রোপণ করা হয়েছে। পর্যাক্রমে চারা রোপণ করে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা হবে।

প্রতিনিধি/এজেড 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর