নেশার টাকার জন্য ঘুমন্ত স্ত্রীর গলায় ছুরি চালান মাদকাসক্ত স্বামী নাইম হাসান কাজল। মৃত্যু হয়েছে ভেবে পালিয়ে যান কাজল। কিছু সময় পর পরিবার ও পাশের লোকজন গোঙানির আওয়াজ শোনে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ নদী ইসলামের গলায় ৫১টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২ জানুয়ারি) রাতে নেত্রকোনা শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী নদী ইসলাম (২১) শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনর মেয়ে। আর স্বামী নাইম হাসান কাজল (২৫) শহরের আনন্দবাজার এলাকার মৃত মানিক মিয়ার ছেলে।
নেত্রকোনা মডেল পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোহলে রানা মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় দুপুরে থানায় মামলা হয়েছে। নদী ইসলামের মা মিনা বেগম বাদী হয়ে জামাই নাইম হাসান কাজল, তার ভাই ও চাচার নামে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা সঙ্কটাপন্ন নদী বলেন, তার স্বামীর কোনো কাজ নেই। তাই মা-বাবা নানার বাড়িতে জায়গা করে দিয়েছে। তাদের ৫ বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। কিন্তু প্রায় সময় কাজল অত্যাচার করে বিধায় পাঁচ-ছয় মাস আগে ঢাকায় বড় মামার বাড়িতে চলে যায় নদী। সেখানে নদীর মাও থাকেন। পরে কয়েকদিন আগে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে কাজল তাকে নিয়ে আসে। আসার সময় মা ও মামা প্রায় অর্ধ লাখ টাকা দিয়ে দেন সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু নেশার জন্য এ টাকা নিতেই সে মেরে ফেলতে আমার গলায় ছুরি চালায়।
সোমবার রাতে টাকার জন্য ঝগড়া করে নিজ ঘরে দুজন দুই জায়গায় ঘুমিয়ে গেলে হঠাৎ করে উঠে এসে বুকের ওপর বসে গলার মধ্যে ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে পালিয়ে যায় কাজল।
বিজ্ঞাপন
পরে ঘরের ভাড়াটে এবং পরিবারের লোকজন গোঙ্গানির আওয়াজ পেয়ে উদ্ধার করে রাতেই জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার গলায় মোট ৫১টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলেও জানান নদী।
পুলিশ, পরিবার-স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় ৭ বছর আগে প্রেম করে অনন্দবাজার এলাকার মৃত মানিক মিয়ার ছেলে নাইম হাসান কাজলের সঙ্গে পশ্চিম নাগড়াবাসী আনোয়ার হোসেনর মেয়ে নদী ইসলাম পালিয়ে বিয়ে করেন। বয়স তখন ১৩ অথবা ১৪। এরপর ধীরে ধীরে মেয়ের মা তার বাবার বাড়ি থাকতে দেন। কিন্তু প্রায় সময় বেকার কাজল টাকার জন্য নির্যাতন করে আসছিল। এক পর্যায়ে কাজল নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে বড় মামার বাসায় কয়েকমাস আগে ৫ বছরের নাতনিসহ ভাগ্নিকে নিয়ে যায়। কিছুদিন ক্ষমা চেয়ে হাতে পায়ে ধরে সেখান থেকে নিয়ে আসে। নেশার জন্য মামা ও মায়ের দেওয়া প্রায় অর্ধলাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই নদীকে এভাবে হত্যার জন্য গলায় ছুরি চালায়।
নদীর বড় মামা আব্দুল মালেক জানান, যেহেতু মেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল, আমরা প্রথমে রাগ করেছিলাম। কিন্তু মেয়ের কষ্টের কথা ভেবে আমরাই ভরণপোষণসহ বাড়ি করে দিয়েছি। এইবার আমার কাছে গিয়ে শেষবারের মতো বলে মাফ চেয়ে নদীকে নিয়ে এসে হত্যা করতে চেয়েছিল। কাজলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে থানায় মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নদীর মা মিনা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে বারবার নির্যাতন করেছে কাজল। এইবার আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে এনে পরিকল্পনা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। আমি এর ফাঁসি চাই। যাতে আর কোন মেয়ের সাথে এমন ঘটনা না ঘটে।
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মনসুর জানান, রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন থাকলেও আমরা সেবা দিচ্ছি। শ্বাসনালিটি কাটেনি বলে বেঁচে গেছে। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।
নেত্রকোনা মডেল পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোহলে রানা জানান, ঘটনার পর আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
প্রতিনিধি/এইচই